বহু অপকর্মের হোতা আদম আলী মুন্সি (৬২)। দলিল জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভূমি দখল, রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া নামজারি করে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া- এমন অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এমনকি জাল দলিল চক্রের সক্রিয় সদস্যও তিনি।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার শরণখোলা এলাকায় তার বাড়ি। তবে এলাকায় মানুষ তাকে ভুয়া মুক্তিযুদ্বা ও ভূমির দালাল হিসেবেই বেশি চেনে।
এমনকি তাকে ‘ভূমিদস্যু আদম মুন্সি’ও বলে ডাকে অনেকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন তার একটাই কাজ, ভূমি অফিসে যাওয়া, দালালি করা।
আর নিরীহ মানুষের দুর্বলতার সুযোগে হয়রানি করা। তিনি জাল দলিলের মাধ্যমে অন্যের ভূমি দখল করে চলেছেন।
একইসঙ্গে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকেও জমি দখল করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন বড় অংকের টাকা। শুধু তা-ই নয়, আদম আলী মুন্সি প্রতিনিয়ত নিজের জন্য বা টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য রেকর্ড জালিয়াতি, ভুয়া পর্চা, খতিয়ান ও নামজারিও করে আসছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ।
আদম আলী মুন্সির দখলবাজির শিকার হয়ে তার বিরুদ্ধে জাল দলিলের মামলাও করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে একাধিক মামলার আসামি তিনি। এরপরও তার অপকর্ম-জালিয়াতি কমছে না, বরং বাড়ছে দিন দিন।
এছাড়া কৌশলে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা তার আরেকটি জালিয়াতির পদ্ধতি। এভাবে তিনি উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা বাস্তবায়ন করেন। একইসঙ্গে খাস জমি লিজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নিম্ন আয়ের সহজ-সরল মানুষকে ঠকানোও তার একটি কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কাজে আদম আলী মুন্সি একা নন। তার সঙ্গে আছে একটি চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতারক আদম আলী মুন্সি। তারা পরস্পরের যোগসাজশে জাল দলিল তৈরি করে সেটা দিয়ে আরেকজনকে জমি দখল করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে পান মোটা টাকা। যা আবার ভাগ হয় তাদের চক্রের সদস্যদের মধ্যে।
এছাড়া ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমাও তাদের হাত দিয়েই বেশি চলে। এমনকি অভিযোগ আছে, কেউ যদি জায়গা বিক্রি করতে চান, তাহলে তাদের একটা পরিমাণ টাকা আগে দিতে হয়। না হলে রেজিস্ট্রি করার সময় ঝামেলা লাগিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।
এলাকায় নিজেকে পরিচয় দেন মুক্তিযুদ্বা। আর এ সুবাদেই চলে তার এসব অপকর্ম। এও জানা গেছে, ভূমির সব পর্যায়ের জাল কাগজপত্র আছে তার কাছে।
গ্রাম্য পঞ্চায়েতের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আদম আলী মুন্সি এলাকায় ভূমির দালাল, এমনকি ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাই তার কাজ। তার নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই। জাল-জালিয়াতি করেই তিনি রাজার হালে চলেন।
এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হচ্ছে না কেনো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এছাড়া এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। কেউ বড় কোনো বিপদে না পড়লে দেন-দরবার, মামলায় যেতে চান না। পাশাপাশি এলাকার মুরুব্বিরাও তাকে কিছু বলছেন না। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলছে না। আশা করছি, প্রশাসন এর একটা ব্যবস্থা নেবে।
সসম্প্রতি নিরীহ এক ব্যক্তির জমি ও দোকান জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
নিরীহ ওই ব্যক্তি তার জমিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করে তার বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়াসহ আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় জমির মালিক ভূক্তভোগী মো. ছিদ্দিক মুন্সি (৪৫) বাদী হয়ে বাগেরহাট আদালতের ফৌ : কা : বি : আইনের ১০৭/১১৭(৩) ধারায় প্রতারক আদম আলী মুন্সিকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।
আদালতে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাদীকে অনধিকার প্রবেশসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করার দাবী জানান ভূক্তভোগী মো. ছিদ্দিক মুন্সি।কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থাই ভুক্তভোগীর জমি দখলে নেয়ার পায়তারা করছে প্রতারক আদম আলী মুন্সি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত মো. আদম আলী মুন্সি’র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।