সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী সোনামিয়া বাজারের এক সময়ের ত্রাস, শীর্ষ সন্ত্রাসী গুলু মেম্বারের শ্যালক হত্যা মামলার আসামী শুটার মনিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আদমজী সুমিলপাড়ার মাদ্রাসার ছাত্র সাগর হত্যা মামলার আসামী হয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর নাসিক ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী এলাকায় ফিরে এসে বিএনপি নামধারী কিছু নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী, দখলবাজী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর স্বরূপে এলাকায় ফিরে এসে শুটার মনির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কদমতলী এলাকার আজিজ প্রধানের ছেলে রনি প্রধানের ইন্টারনেট ও ডিশের সরঞ্জাম খুলে নিয়ে যায় এবং রনিকে বাঁচতে চাইলে এলাকা ছেড়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করে। কদমতলী কলেজ গেট এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সোহেলের কর্মচারীদের ধরে নিয়ে যায় মনির। তখন খবর পেয়ে সোহেল মনিরের কাছে জানতে চাইলে তাকে মারধর করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। কদমতলী ১০ তলা আবাসিক ভবন এলাকায় মনির তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পানি উন্নয়নবোর্ডের সরকারী জায়গা দখল করে অফিস নির্মাণ করার পায়তারা চালাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির ক্যাডার বাহিনীর কয়েকজনকে এবং নাসিক ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিপনের কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে একটি বাহিনী তৈরী করে নৈরাজ্য শুরু করেছিল শুটার মনির। গত বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত দুইটি হত্যা মামলায় শুটার মনিরকে আসামী করায় বর্তমানে সে গা ঢাকা দিয়েছে।
সাধারণ মানুষের দাবি, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে যে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে সেটাকে পুরো বিশ্ব সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সাথে সাথে সারা দেশে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট হয়েছে, চলছে চাঁদাবাজিও। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এক লুটেরাকে বিদায় করেছে আরেক লুটেরাকে মসনদে বসানোর জন্য নয়। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটকে রোধ করার জন্য ঘোষণা দিয়ে বলেন, বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী যদি এ অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। একই সাথে এ সময়ে যাতে অন্য দল থেকে সুবিধাভোগী অথবা হাইব্রিড নব্য বিএনপি ওয়ালারা দলে যোগ দিতে না পারে সে ব্যাপারেও তিনি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমান অস্থির সময়ে বিএনপির হাই কমান্ডের এ ধরণের সাহসী সিদ্ধান্ত দেশের বর্তমান অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলাকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে বড্ড নিয়ামক ভুমিকা রাখবে বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এস এম আসলাম স্পষ্ট করে বলেন, যদি বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, লুটপাট ও অবৈধ দখল করে থাকে তাহলে আপনারা নির্ভয়ে লিখুন। কারণ আপনারা পত্রিকায় না লিখলে আমরা জানব কিভাবে। আমাদের নেতা আলহাজ¦ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এ সকল দখলবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে। এ ধরণের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১০ মে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া আইলপাড়া এলাকায় নারী সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে আদমজীর এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম হোসেন গুলু, তার শ্যালক মনির হোসেন ওরফে শুটার মনির ও ইন্টারপোলের এক সময়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে গোলাগুলিতে সাগর (১৪) নামক এক মাদ্রাসা ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তখন থেকে শুটার মনির আত্মগোপনে ছিল।