শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে দুদক কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩ | ৩:২৬ অপরাহ্ণ

সোনারগাঁয়ে  দুদক কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ

দীর্ঘদিন যাবত দুদক কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশ আতঙ্কে বসবাস করছেন সাধারণ আমজনতা। গ্রেপ্তারের ভয়ে দিনরাত সতর্কতার সাথে অবস্থান করছে অনেকেই। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মহল্লার রাস্তায় কেউ বের হচ্ছে না আবার অনেকে নিজ বাড়িতে রাতে ঘুমাতেও ভয় পাচ্ছেন। অথবা কেউ দাবিকৃত চাঁদার টাকা যোগান দিতে না পেরে বিভিন্ন জনের নিকট দেন দরবার করছেন।বিগত একমাস যাবত এভাবেই দিন পার হচ্ছে সোনারগাঁ উপজেলার পৌরসভার ষোলপাড়া এলাকার সাধারণ জনগণের।

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর ও সানাউল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৭’ই মে দুপুর আনুমানিক এক ঘটিকার সময় প্রায় ৮ থেকে ১০ জন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পোশাকের আদলে পোশাক পরিধান করে ষোলপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কার্যালয় সংলগ্ন একটি লিচু বাগানে এসে উপস্থিত বাগান পাহারাদার ও বাগানিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ধরপাকর করতে থাকে।

কেউ পরিচয় জানতে চাইলে নাজমুল হাসান জয় ও জীবন আহমেদ বলে, আমরা সকলেই ডিবি পুলিশের লোক। অন্যদিকে প্রতারনা চক্রের প্রধান মোক্তার হোসেন মুক্তাদি নিজেকে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং ঢাকার সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় তার চেম্বার বলেও জানায়। তাছাড়া এই চক্রটি আসারও এক ঘন্টা পর ‘জান্নাত জাহা’ নামের চক্রের আরো এক নারী সদস্য স্কুটি চালিয়ে এসে তাদের অবস্থান নির্ণয় করে সবকিছু পর্যালোচনা করার চেষ্টা করে।

অতঃপর তাদের মৌখিক পরিচয় পেয়ে উপস্থিত পাহারাদার ও বাগানিদের মধ্যে কয়েকজন দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়। আর বাকিদের চারিদিক থেকে ঘেরাও করা হয়। এমনকি পাশে দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন বয়স্ক পথচারীকেও ঐ ঘেরাও বেষ্টনীর ভেতর আনা হয়। এরপর চলতে থাকে লিচু বাগানের জমি সংক্রান্ত প্রতিপক্ষের বিরোধের বিষয়ে জেরা।

ঘটনার এক পর্যায়ে আরো কিছু এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। ফলে চক্রটি এলাকাবাসীর উপর চড়াও হয়। অবশেষে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে কেউ কেউ নিজেদের সাংবাদিক বলে দাবি করে তবে চক্রের প্রধান মোক্তার হোসেন মুক্তাদি দুদকের কর্মকর্তার পাশাপাশি নিজেকে সাংবাদিক বলেও পরিচয় দেয়। অতঃপর চক্রটি স্থানীয় বাসিন্দাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।

এক পর্যায়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধের সমাধান করে দিবে বলে স্থানীয় বাসিন্দা আজিজ, সানাউল্লাহ, মজিবর ও সবুজসহ আরও কয়েকজনের নিকট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং দাবিকৃত ৫ লক্ষ টাকা সহ পৌরসভার হাতকোপা এলাকায় অবস্থিত নতুন ব্রিজের উল্টোদিকে দোতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে তাদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে (যাহা বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউজ ক্লাবের একটি শাখা হিসেবে সাইনবোর্ড লাগানো) দ্রুত যোগাযোগ করতে বলে চলে যায়।

অন্যথায় তাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানায় এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিতেও ছাড়েনি। এমতাবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাগণ আতঙ্ক ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মোঃ আব্দুল আজিজ কে বাদী করে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগের এক মাস পার হলেও থানা কর্তৃক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানা যায়। উল্টো ওই প্রতারক চক্রটি প্রতিনিয়ত এলাকায় গিয়ে অথবা মোবাইলে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট দাবিকৃত ৫ লক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে বলে দাবী এলাকাবাসীর।

উল্লেখ্য, সকলের পরিচয় পাওয়া না গেলেও কুমিল্লার বাসিন্দা মুক্তার হোসেন মুক্তাদি, জীবন আহমেদ ও জান্নাত জাহা তারা একে অপরের ভাই বোন বলে জানা গেছে এবং সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ঘর জামাই ঢেউটিন ব্যবসায়ি মোঃ দেলোয়ার হুসাইন বরিশালের বাসিন্দা বলে জানা যায়।

গোপন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকবছর যাবদ মোক্তার হোসেন মুক্তাদি তার দল বল নিয়ে সোনারগাঁ সহ আসপাশের বিভিন্ন এলাকায় কখনো ডিবি, কখনো দুদক কর্মকর্তা, কখনো এডভোকেট আবার কখনো, নারায়ণগঞ্জ জেলা দূর্নিতি দমন অফিসার, কখনো বাসস এর সদস্য, কখনো আইন অধিকার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা, আবার কখনো ডিইউজের সদস্য, কখনো সিনিয়র সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলিং করে ইতিমধ্যে সোনারগাঁয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।

এই ভূয়া পরিচয়ের শিকার হয়েছে সোনারগাঁয়ে পুলিশ, ডাক্তার , ব্যাবসায়ী , কাজী অফিসের ভারপ্রাপ্ত কাজী, ব্যাবসায়ী দ্বীনিসলাম সহ আরো অনেকেই। এদের মূল টার্গেট সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

শুধু তাই নয়, ভূয়া টিম লিডার মোক্তাদির হোসেন মুক্তাদী ও তাঁর সহোদর বোন জান্নাত জাহার রয়েছে অসংখ্য নামি বেনামি ফেসবুক আইডি। এসব আইডি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। নানা রকম ভিডিও ও ছবি বিকৃতি করে সাধারণ মানুষের সম্মান নষ্ট করার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে । এ সকল বিষয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ কে অবগত করলেও কোন ব্যবস্থা নেইনি এখনো পর্যন্ত।

গোপন সূত্রে জানা যায়, এ পরিবারটি কিছু দিন পর পর স্থান পরিবর্তন করে। ঢাকা থেকে সোনারগাঁওয়ে কি বা কেন আত্মগোপনে রয়েছে । সোনারগাঁ থানা সহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন