মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ মঙ্গলবার | ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোন্দলে ক্ষত-বিক্ষত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগ

শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কোন্দলে ক্ষত-বিক্ষত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগ

ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। অথচ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগি সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ নারায়ণগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে। অভ্যন্তরীন কোন্দল ও শীর্ষ নেতাদের মতানৈক্যের কারণে বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন হচ্ছে না জেলা ও মহানগর কমিটির। এরমধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছরেও জেলা যুবলীগের কমিটি পুর্ণাঙ্গ হয়নি।
আংশিক কমিটি পার করেছেন ১২ বছর। আবার জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জেলা যুবলীগ ৬ বছর ধরে কান্ডারীবিহনী। রীতিমত জেলা যুবলীগ জেলা আওয়ামীলীগে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে জেলা যুবলীগের নিয়ন্ত্রনাধীন উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর সাংগঠনিক ভীত মুখথুবড়ে পড়েছে। অন্যদিকে মহানগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ বছর আগে।
অপরদিকে মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মত বিরোধের কারণে ২৭টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কোন কমিটি নেই। তাছাড়া মহানগর যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একজোট হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরেও কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ফলে দুই ধারায় বিভক্ত মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক অবস্থা হ-য-ব-র-ল। জেলা ও মহানগর যুবলীগের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে হতাশ মাঠ পর্যায়ে নেতাকমর্ীরা। তারা বলছেন, জেলা ও মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত না হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রাথর্ীর বিজয়ে এর প্রভাব পড়বে।
তবে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগি ও পরিচ্ছন্ন একাধিক নেতাকমর্ী অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে দলের সাংগঠনিক ভীত মজবুত করার চেয়ে নিজের আখের গুছাতে বেশি ব্যস্ত যুবলীগের নেতারা। ফুলে ফেপে অনেকেই বিত্তশালী হয়েছেন। দেশে গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা, ফ্ল্যাট হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই নেতারা বিদেশেও ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন। যাতে দেশে রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হলে বিদেশে তারা আরাম আয়েশে থাকতে পারেন। আবার যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের বেশিরভাগ রাজধানীতে বিলাশবহুল আবাসনে অবস্থান করছেন। দামী গাড়ি হাকিয়ে জমিদারী কায়দায় নারায়ণগঞ্জে এসে রাজনীতি করেন।
তবে দলীয় একাধিক সূত্র মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটি নাও হতে পারে। কারণ নতুন কমিটি করতে গেলে দলীয় কোন্দল চরমভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই হয়তো ছোট আকারে আহবায়ক কমিটি করে দেয়া হবে।
দলীয় তথ্যমতে, ২০০৫ সালে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা থাকা অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আলহাজ আব্দুল কাদির (মেয়র আইভীর ভগ্মিপতি) ও সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল (শামীম ওসমানের বন্ধু) নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে জাকিরুল আলম হেলালকে করা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, আসিফ হোসেন মানুকে সহ-সভাপতি ও শাহ নিজামকে করা হয়েছিল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এরমধ্যে পরবর্তীতে জাকিরুল আলম হেলাল ও শাহ নিজাম মহানগর আওয়ামীলীগে যুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া দীর্ঘ ১২ বছর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতানৈক্যের কারণে জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এরমধ্যে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটিতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদলকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এবং ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদিরকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি করা হয়। ফলে জেলা যুবলীগের এই দুই শীর্ষ নেতা জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন হওয়ার পর তারা যুবলীগের কোন কর্মসূচি পালন করেন না। এতে ৬ বছর ধরে জেলা যুবলীগ নেতৃত্বহীন। তাছাড়া ২০০৫ সাল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। যা অদ্যাবদি বিদ্যমান।
অপরদিকে ২০০৫ সালে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ শহর যুবলীগের (বর্তমানে মহানগর) কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি শাহদাত হোসেন ভুইয়া সাজনু ও সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী রেজা উজ্জল। এরমধ্যে সাজনু শামীম ওসমানের অনুসারী আর উজ্জল মেয়র আইভীর ছোট ভাই। মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে দীর্ঘ ১৮ বছরেও একজোট হয়ে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখেনি নেতাকমর্ীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদা ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। ৩ বছরের মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ বছর আগে। ফলে নতুন কমিটি না আসায় মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা হতাশ। তাছাড়া তাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২৭টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কমিটিও নেই।
এদিকে দলীয় সূত্রমতে, গত ২৩ আগষ্ট কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ২৮ আগষ্ট সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুব লীগের পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেয়ার শেষ দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক পদে বর্তমান সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, জেলা যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, যুবলীগ নেতা আহম্মেদ কায়সারসহ যুবলীগের বর্তমান ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আগ্রহী প্রার্থীরা তাদের জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেয়ার পর পদ-পদবি পেতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দারস্থ হচ্ছেন। নানা ভাবে লবিং করছেন। মহানগর যুবলীগের বর্তমান সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু বলেন, আশা করি, কমিটি হয়ে যাবে।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়ে যাবে। সে ভাবেই কাজ চলছে।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তফিজুর রহমান মাসুদ জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদের জন্য নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা সেগুলো যাচাই বাছা শেষে শীঘ্রই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে। পরবর্তী সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন