রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ রবিবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুদ্ধে নায় কৈশলে মিয়ানমারকে সামাল দিতে হবে মিয়ানমার প্রসংঙ্গে বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে?

মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৪:০০ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধে নায় কৈশলে মিয়ানমারকে সামাল দিতে হবে  মিয়ানমার প্রসংঙ্গে বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে?

মীর আব্দুল আলীম:
সংঘর্ষে জড়ানোর উস্কানি দিচ্ছে মিয়ানমার। বহু বছর ধরেই দেশটি তা করছে। ২০১৮ সালেতো যুদ্ধই বাঁিধয়ে দিয়েছিলো। বাংলাদেশ বিচক্ষনাতার সাথে তা সামাল দিয়েছে। এবারও তাই করতে হবে। উস্কানী দেওয়ার মতো আমাদের অনেক শত্রু রয়েছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, “মিয়ানমারে যে যুদ্ধ চলছে তা কতদিন চলবে আমরা জানি না। আমাদের সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আসতে দেব না। আমাদের বিজিবিকে আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না, যুদ্ধ চাইও না। এটা প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে আমাদের গায়ে এসে পড়বে আর আমরা ছেড়ে দেব। সেটার জন্য আমরা সবসময় তৈরি আছি।” অর্থাৎ আমরা সহ্য করবো; সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে ছাড়বও না। মিয়ানমার আমাদের সাথে গায়ে পড়েই লাগতে চায়। বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এবং চলমান সংকট দুর করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কারো পাতা ফঁাদে পড়ে যুদ্ধে জড়ানো সমীচীন হবে না। সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে।
২০১৮ সালের কথা মনে আছে নিশ্চয়। হঠাৎ করে ১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও সামরিক সরঞ্জামসহ শক্তি বৃদ্ধি এবং ফঁাকা গুলি ছোড়া, আঁকাশসীমা লঙ্ঘন নেহায়েতই ছিলো উদ্দেশ্যমূলক। এ ধরনের আচরণ মোটেই সৎ প্রতিবেশীসুলভ ছিলো না। সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি জোরোলো অভিযান শুরু করেছে আরকান আর্মিসহ দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। এর ফলে গত সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তেও সংঘর্ষ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। দুপক্ষের ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা যুদ্ধ চলছে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির বহু সেনা উত্তরপশ্চিম সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৬৬ সদস্য পালিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারী বান্দরবনে আশ্রয় নিয়েছে।
রাখাইনসহ মিয়ানমারের নানা অংশে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের চলমান লড়াই নিয়ে নতুন করে সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং বঙ্গোপসাগরে। চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতি চলতে থাকলে আরও শরণার্থী আসার আশঙ্কার কথাও বলছেন কোন কোন মহল। এভাবে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি। সবশেষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষ বাংলাদেশের সীমান্ত অ লেও নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি করেছে।
গত কিছুদিন ধরে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির অব্যাহত লড়াইয়ে রোহিঙ্গা সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। দেশটির বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফঁাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। তাদের অস্ত্র ও গুলি বিজিবি’র হেফাজতে আছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভয় আর আতঙ্কে সীমান্তঘেঁষা পঁাচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। মিয়ানমারে এরকম উদ্ভুত সংকটের মুখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও সংকটের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি কেবল প্রতিবাদ করবে? যুদ্ধ করবে? নাকি কৌশলী হবে? কি করবে বাংলাদেশ? অনেকে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করেন। দেশের কথা ভাবেন না। যুদ্ধ করার কথাও কেউ কেউ বলেন। হয়তো তঁারা ভেবে বলেন না। নয়তো দূরদর্শিতা নেই তঁাদের। এখানে সরকারকে দোষারোপ করলে হবে না। বিরোধী দলকে এ নিয়ে রাজনীতি করলে হবে না। গোটা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিষয় এটি। জানমালের বিষয় এটি। দেশের স্বার্থেই সরকারের এই ইস্যুতে যুদ্ধে জড়ানো ঠিক হবে না। আমরা লক্ষ করছি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব মোড়লরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে আজ নানা কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন সময় কে কাকে সমর্থন করে, আর কে কার বিরোধিতা করে এনিয়ে সংশয় রয়েছে। কঠিন কোন সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যুদ্ধ করার কি দরকার? মিয়ানমার দখল করবো? কখনই না, আমরা দখলবাজ জাতি নই। উভয়ের মধ্যে সমস্যা হলে যুদ্ধ কোন সমাধান আনবে না। যুদ্ধে সম্পদ, জানমালের অপূরনীয় ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ মিয়ানমার কেন , কারো সাথেই যুদ্ধে জড়াবে না। মায়ানমারের সাথে সীমান্ত মাত্র ২৫০ কিমি এর মতো। এর মধ্যে আবার নাফ নদীর সীমান্ত বিভাজন আছে। এতো কম সাইজের রণাঙ্গনে টোটাল ওয়ার কথাটাই হাস্যকর। আর মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আজ অব্দি যেসব সংঘর্ষ হয়েছে তা মূলত সীমান্ত সংঘর্ষ। সেখানে বাংলাদেশের রেকর্ড বরাবরই ভাল। যেমনটা ২০০১ সালে আরেকটি পাশের দেশের সীমান্তরক্ষীদের মেরে বঁাশের মধ্যে চ্যাংদোলা করে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছিলাম আমরা। আজ পর্যন্ত তো আমরা সীমান্তরক্ষীদের দিয়েই কাজ সেরে ফেলেছি। মূল সেনাবাহিনী ডাকবার দরকারই পড়েনি। সুতরাং, মায়ানমার বাংলাদেশের জায়গা দখল করবে এটা অবাস্তব চিন্তা। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রতি তাদের আগ্রহ আছে। কিন্তু তাদের নৌবাহিনী তো অতি সম্প্রতি জেলেনৌকা থেকে লোহার জাহাজের স্তরে উঠেছে। নৌযুদ্ধটা আমরা বাঙালরা তাদের চেয়ে ভালোই করি। শুধু ১৯৭১ সালেই নয়। বাংলার বারো ভুঁইয়াদের আমলেও নৌবাহিনী দিয়ে আমরা মোগলদেরকে নাস্তানাবুদ করেছি।
যতটা বুঝি বাংলাদেশ-মিয়ানমার যুদ্ধের আশঙ্কা ক্ষীণ। তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিগত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরের বিদ্রোহীদের দমনের জন্য যে সামরিক তৎপরতা গ্রহণ করেছে তাতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা অতিক্রম করে করেছে কয়েকবার। তাছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার সেলের গোলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। এতে করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতি যে রূপ আচরণ করেছে তা দেখে বোঝাই যায় মিয়ানমার ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে বড় কোন সংঘাতে যেতে প্রস্তুত। তারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সামরিক বাহিনীকে উন্নত করে চলেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের সিংহভাগের যোগানদাতা রাশিয়া এবং চীন। এছাড়াও তারা বাংলাদেশকে চাপে ফেলানোর জন্য এখন ভারতের সাথেও সামরিকভাবে সুসম্পর্ক গঠন করছে। মিয়ানমার ভারত থেকে সাবমেরিন গ্রহণ করেছে, আকাশ মিসাইল সিস্টেম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। মিয়ানমার ভালো করে জানে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ভারতীয় অস্ত্র ক্রয় করতে কখনোই ইচ্ছুক নয়। তাই তারা ভারতের সাথে অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে পাশে রাখতে চাইছে। এর পরও বলব মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ অনিবার্য কিনা তা নিয়ে মতামত দ্বিধাবিভক্ত। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কম, অন্যরা মনে করেন যে এটি একটি বাস্তব সম্ভাবনা। রাহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যদি মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে না পায়, তাহলে এটি বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা একটি অস্থির এবং অনিরাপদ সরকার। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি। এটি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধের সম্ভাবনা কম, তবে এটি একটি বাস্তব সম্ভাবনা। এই বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আমাদের সাথে সমস্য তৈরি করার জন্য বহিশক্তি সব সময় কাজ করছে। মিয়ানমারকে তার উস্কে দেয় সব সময়।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যুদ্ধ হলে কে জিতবে তা নিয়ে নিশ্চয় গবেষণা, বিতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত থাকেন, বাংলাদেশের বুমিং ইকোনমির বারোটা বাজবে (কেননা বাজেটের বিশাল অংশ যাবে যুদ্ধাস্ত্র কেনা, যুদ্ধের ব্যয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি মেরামতে, সাথে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে যে বিশাল অর্থনৈতিক ফ্রন্ট খোলা হয়েছে তারও সর্বনাশ হবে) আর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখল ও বিদ্যমান অন্যায়-অনিয়মকে ঢেকে দেবার একটা সুযোগ তৈরি হবে।
মনে রাখি, ১১ লাখ রোহিঙ্গা তাড়াবার, জেনোসাইডের এতবড় ঘটনায়ও বিশ্বশক্তিগুলো নিন্দাবাদ ও সামান্য সহানুভূতি জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। যুদ্ধ লাগলে আদৌ কাউকে যে সঙ্গে পাওয়া যাবে তাতে গভীর সন্দেহ আছে।
কারন মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত অস্থীতিশীল হলে বাংলাদেশের ক্ষতি। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে না। বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রধান শর্ত স্থীতিশীলতা।যুদ্ধপ্রবন অ লে বিদেশিরা বিনিয়োগ করে না। যেমন: পাকিস্তান। বাংলাদেশের অর্থনীতির গ্রোথ ভাল।যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ২০ বছর পিছিয়ে দিবে। মিয়ানমারের বিভিন্ন উপজাতি এক হয়ে যাবে।তারা এখন একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করছে কিন্তু যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্যা হবে তারা এক পতাকার নিচে চলে যাবে।এজন্যই মিয়ানমার আর্মি বাংলাদেশকে উস্কাতে চেষ্টা করে। রোহিঙ্গা ইস্যু মানবাধিকার সমস্যা থেকে বাংলাদেশ মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হয়ে যাবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি বেশি।
বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের “না ধরি, না ছাড়ি” এমন সম্পর্কের বাইরে গভীর কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয়নি। সেই ঢিলেঢালা সম্পর্কও কিছুটা কমে গেছে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের পর। এখন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাঝে সম্পর্ক বলতে কেবল কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ককেই উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ এ বছরই ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিঁয়াজ নিয়ে সংকটের পর গত বছর বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পিঁয়াজ আমদানি করেছিলো। স্বল্প পরিমাণে হলেও এছাড়াও কিছু আমদানি রপ্তানি হয়।
মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়ালে কি হবে? বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়ায়নি, তার উপর সামরিক দিক দিয়ে মিয়ানমার কিছুটা এগিয়ে। মিয়ানমারের আয়তন বাংলাদেশের থেকে সাড়ে চারগুণ বেশি, বিপরীতে জনসংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগ! ধরে নেয়া যায় যুদ্ধে প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশেরই বেশি হবে। তাছাড়া আমার ধারণা কেবল রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে গিয়ে যুদ্ধে নামলে বাংলাদেশের যত ক্ষতি হবে তা রোহিঙ্গাদের রেখে দিলে যত ক্ষতি তার থেকে বহুগুণ! এর বাইরে একটি অর্থনীতিতে উদীয়মান শক্তির দেশের তের চৌদ্দটা বাজাতে একটা যুদ্ধই যথেষ্ট!
আসলে কী চায় মিয়ানমার? সম্ভবত তারা যুদ্ধ নয় বরং বরাবরই বাংলাদেশকে উসকানি দিয়ে সীমান্তে ঝামেলার সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমের আড়াল করতে চায়। ভয় দেখিয়ে রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়টি পেছনে ফেলতে চায়। মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা এমন আচরণ প্রত্যাশা করি না। কোনো ধরনের উসকানিমূলক বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণ তাদের কাছ থেকে কাম্যও নয়।
বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি, উসকানি প্রদান ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। কয়েকবার দেশটির হেলিকপ্টারের বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্ত ঘেঁষে টহল এবং মাইন স্থাপন, সেই সাথে ড্রোন ইত্যাদিকে বিরোধে জড়ানোর উসকানি হিসেবেই দেখছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বিপরীতে বাংলাদেশ সবসময় সংযত আচরণ প্রদর্শন করে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধানের নীতিতে অটল থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অটুট রেখে বিজিবি বরাবরই সংযত আচরণ করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের বারবার উসকানির বিষয়টিতে বহিবিশ্বের (অপশক্তির) ইন্ধন থাকাটা অমূলক নয়। গায়ে পড়ে কেন তঁারা ঝগড়া করতে চায়? যুদ্ধ বঁাধলেই ফায়দা লুটবে কারা, তা দুই সরকারেরই মাথায় রাখতে হবে। যুদ্ধ কোনো দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়ন অনেকেই কিন্তু ভালো দৃষ্টিতে নেয় না। অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চায়, তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়ে রেখে করুণা করতে চায় বাংলাদেশকে, তারা মিশকিনের দেশের তালিকায় রাখতে চাায়। আমাদের তাই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এখন ঝগড়া করলে চলবে না। যুদ্ধে না জড়িয়ে কৌশলী হতে হবে বাংলাদেশকে। মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে। মিয়ানমার উসকানি দিচ্ছে কাদের ইশারায়? দেশটি সীমালঙ্ঘন করছে কাদের নির্দেশে? দেশটি কেন আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মানছে না? রোহিঙ্গাদের এদেশে চাপিয়ে দিয়ে উল্টো গায়ে পড়ে বাংলাদেশের সাথে ঝগড়া করতে চাইছে দেশটি। এর অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশ্ব মোড়লদের ইশারা তো আছেই। তা নাহলে কোন শক্তিতে মিয়ানমারের মতো দেশ বার বার সীমা লঙ্ঘন করছে।
সর্বশেষ বলতে চাই- এ বিষয় গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বিচক্ষণতার সাথে বাংলাদেশকে ভেবে চিন্তে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। যুদ্ধে না জড়িয়ে কৈশলে মিয়ানমারকে সামাল দিতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এবং চলমান সংকট দুর করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কারো পাতা ফঁাদে পড়ে যুদ্ধে জড়ানো সমীচীন হবে না। সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে।

৥লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন