সোমবার, ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ সোমবার | ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল, হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা

বুধবার, ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

সিদ্ধিরগঞ্জে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল,  হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা

সিদ্ধিরগঞ্জে নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবি ও সম্মানিত ব্যাক্তিদের বাড়িতে ডেকে এনে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের জোরপূর্বক বাধ্য করে তাদের আপক্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে বলে মান সম্মানের ভয়েও এ বিষয়ে পুলিশের সহায়তা নিতে চাননা।
অন্যদিকে কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিতে চাইলেও এ চক্রটির মূলহোতা নিজেকে গণমাধ্যমকমর্ী পরিচয় দিয়ে থাকে বিধায় ভুক্তভোগীরা ইচ্ছে থাকলেও পুলিশের ধারস্থ হতে সাহস পায়না।
একাধিক ভুক্তভোগী তাদের নাম পরিচয় না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে চা ল্যকর কিছু তথ্য প্রদান করেন। তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন কৌশলে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এ চক্রটি। এ চক্রের মূলহোতা হচ্ছেন আরিফ নামে এক প্রতারক। আরিফের মূল সহযোগী হলো তার স্ত্রী কনা ওরফে কনিকা। তাদের অধীনে রয়েছে একাধিক সুন্দরী নারী। এদের অনেকেই আবার নিজেদের মডেল বলে উপস্থাপন করে।
মূলহোতা আরিফ নিজেকে গণমাধ্যম কমর্ী পরিচয় দিয়ে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে তাদের মোবাইল নাম্বার, ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে তার স্ত্রী কনা ওরফে কনিকার কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে কনিকাসহ ওই গ্রুপের নারীরা মাঠে নেমে পড়ে তাদের নির্দিষ্ট টার্গেটে। ছলেবলে কৌশলে তাদের সাথে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। ধীরে ধীরে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরীর অভিনয়ে কাছে ডেকে নিয়ে যায় তাদের নিধার্রিত আস্তানায়।
এরপর সেখানে পাল্টে যায় তাদের রুপ। নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। নেমে পড়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশলে। ওই সময়ই সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন পরিচয়ে আরিফ হানা দেয়। তারপর মেয়েদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারন করে প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এমন এক ভুক্তভোগীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আরিফ কৌশলে তার নিজের স্ত্রী কনা ওরফে কনিকাকে দিয়ে মোবাইল ফোনে অভিনব পন্থা অবলম্বন করে প্রেমের ফঁাদে ফেলে তাদের ফ্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তিনি দেখেন ওই ফ্ল্যাটে কনিকাসহ একাদিক সুন্দরী মেয়ে রয়েছে। এক পর্যায়ে আরিফ এসে ওই সব মেয়েদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারন করে প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আরিফ এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে রাজ নামে এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২ লাখ ২০হাজার, ব্যবসায়ী নিরবের কাছ থেকে ৭০ হাজার, শহিদের কাছ থেকে ৫০ হাজার, ফরিদেও কাছ থেকে ৫০ হাজার, হিরাঝিল এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাজ থেকে নিয়েছে ৪০ হাজার।
আরও জানা গেছে, আরিফ একাধিক বিয়ে করেছে। নিজের স্ত্রীদেরকেও এ কাজে ব্যবহার করে। প্রথমে বিভিন্ন ধনাড্য ব্যক্তিদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে নারীদের দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করানো হয়। পরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলে নিজেদের ঠিক করা ফ্ল্যাট বাসায় আনা হয় এবং টার্গেটকৃত ঐ ব্যক্তিদের আরিফের পালিত নারীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরিবেশ তৈরী করে।
এসময় আরিফ ও তার লোকজন উক্ত ফ্লাটে উপস্থিত হয়ে তাদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পরে ধনাড্ড ব্যক্তিদের ব্লাকমেইক করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় আরিফসহ তার সহযোগীরা।
জানাযায়, আরিফ এক সময় ডিবি পুলিশের সোর্স ও মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা ছিল তার। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ সিআই খোলা এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিক্সা চুরির ঘটনায় ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয় আরিফ। পুলিশ হয়রানি থেকে বঁাচার জন্য সহজ পন্থ্যা বেছে নেয় সন্ধাবানী নামে একটি পত্রিকার কার্ড। সাংবাকিদ পরিচয় দিয়ে নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ২৩ জুলাই এক মোটরবাইক চুরির দায়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই নজরুল তাকে আটক করে। হাউজিং এলাকার হুমায়ুন নামে এক ব্যক্তি তার ফেজার ব্রান্ডের একটি বাইক চুরির অভিযোগ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আরিফকে আটক করে পুলিশ। পরে বাইক ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে বাদি ও বিবাদির মিমাংশায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় আরিফ।
দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে এ কাজ করে আসছে তারা। কাজের সুবিধার্থে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে কিছুদিন পর পর তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করে। অভিযুক্ত আরিফের একদিক স্ত্রীর মধ্যে দুই স্ত্রী থাকে কদমতলী, আর কনিকা থাকে তার সাথে।
অপর একটি সূত্র জানায় এ চক্রটি নেপথ্যে থেকে শেল্টার দিয়ে থাকে ইপিজেড এলাকার ব্যবসায়ী বহু অপকর্মের হোতা কালাম ও নাসির।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এরকম অভিযোগ পেয়েছি। এদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি দ্রুত এদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন