নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) জায়গায় পাকা দোকান নির্মাণ করে সরকারী জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠেছে তার বোন পারুলের (৪০) বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের উত্তর কদমতলী গ্যাস লাইন এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাড়া মহাল্লায় চলছে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সরজমিনে উত্তর কদমতলী গ্যাস লাইন এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রের দেখা মিলে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) রাস্তা ও ডিএনডি লেকের চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য সরকারী জায়গায় করা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ফের কাউন্সিলর মতির প্রভাব ক্ষাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবারও দখল করে পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন তার বোন আবুল হোসেন টাওয়ারের মালিক পারুল।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, আবুল হোসেন টাওয়ারের মালিক পারুল তার ভাই কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির দাপটে এই দোকান নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ কাজের সময় আমাদের ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খাঁন রিপন একাধিকবার বাধা দিলেও পারুল তার কথা শুনেননি। পারুলের ভাই মতি হলেন ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সলর। সে কিভাবে ৭নং ওয়ার্ডে এসে ক্ষমতার দাপট দেখায় এ নিয়ে আমরা আতংঙ্কে রয়েছি।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি সাড়ে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে কাউন্সিলর মতি দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি মতি ও স্ত্রী। দুদকের মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকেই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন কাউন্সিলর মতি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সরকারি জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও রাস্তা করার পূর্বে এই জায়গা দখলমুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কাজ চলমান থাকা সত্বেও তারা কিভাবে সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন। কান্সিলর মতির বোন পারুল যায়গাটি নিজের দাবি করেন।
অন্যদিকে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া বলেন, তারা জোর করে সরকারি জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এ নিয়ে কাউন্সিলর রিপন একাধিকবার বাধা দিলেও তারা কারো কথা শুনেননি। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা মামলা হামলার ভয় দেখান। তাই কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তারা মার্কেট নির্মাণ করায় সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জোর পূর্বক সরকারি জায়গা দখল করে চলাচলের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ও লেকের সৌন্দর্য নষ্ট করার পায়তারা করছে বলে জানান তিনি। তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তাই এসব ভূমিদস্যু ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মেয়র ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা না রেখে দোকাণ নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ায় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বোন আবুল হোসেন টাওয়ারের মালিক পারুলের দোকান ভেঙ্গে দেন রাজউক। রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় অনিয়মের দায়ে পারুলকে নিয়মিত মামলা দিয়ে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, অভিযানে অনিয়মের দায়ে পারুলকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হলে সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পাশের একটি রেস্তোরায় দুই ঘন্টা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয় পারুলকে। ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান দুদকের চার্জশিটভুক্ত আসামি কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও তার ক্যাডার বাহিনী। ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকায় বাড়তি কোন সুবিধা নিতে পারেননি মতি। একে একে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মতির একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। তবে খবর সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হোন কাউন্সিলর মতি, তার ক্যাশিয়ার মানিক মাষ্টার, মতির ভাগিনা আল মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন, মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড বিতর্কিত তেল চোর চক্রের হোতা আশরাফ উদ্দিন ওরফে আশরাফ। অভিযোগ উঠেছে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বেশি উত্তেজিত কথা বলেন মতির ক্যাশিয়ার মানিক মাষ্টার ও মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন।
তবে গুঞ্জুন রয়েছে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরকারি জায়গা দখল করে যে পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন বোন পারুল সেগুলোকে রক্ষা করেছেন মতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খাঁন রিপন বলেন, কি বলবো বলার কিছুই নাই। তারা (কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি) কারো কথাই শুনেন না। তার (কাউন্সিলর মতি) বোন যখন সরকারী জায়গায় দোকান নির্মাণ কাজ করেন তখন আমি মৌখিক ভাবে বাধা দিয়ে ছিলাম। কিন্তু তারা আমার কোন কথাই শুনেননি।
সরকারি জায়গা দখল করে পাকা দোকান নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসেন টাওয়ারের মালিক পারুল বলেন, আমি কে চিনেন? আমি কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বোন। নাসিক ৬নং ওয়ার্ড থেকে এসে নাসিক ৭নং ওয়ার্ডে এসে বাড়ি করেছি এলাকার মানুষদের নিয়ে চলতে হবে তাই আমি আমার পরিচয় কাউকে দেই না। সরকারী জায়গায় দোকান নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে পারুল বলেন, সবাই সবার বাড়ির সামনের জায়গা দখল করে খায়। তাই আমিও আমার বাড়ির সামনে দোকান নির্মাণ করছি। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে তখন ভেঙে দিবো।
ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, কাটা ঘায়ে লবনের ছিটে দিতে আসছেন। আমার বোনকে টাকার জন্য দুই ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে আমি কতটুকু ছোট হয়েছি সেটা আমি জানি। সাংবাদিকদের উপর কেউ কোন প্রকার চাড়াও হয়নি বলে জানান কাউন্সিলর মতি।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ঢাকা বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: সাইফুর ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসলে পুরো প্রজেক্টা এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডর যে প্রস্তাবিতবস্থা সেটা পিপি আরের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবহিনী যতদিন পর্যন্ত প্রজেক্ট বুঝিয়ে না দিবে আমরা কিছুই করতে পারবো না। তবে এসব অসংগতি যদি দেখতে পাই তাহলে বিষয়টি আমরা সেনাবহিনীর নজরে আনলে তখন তারা উচ্ছেদ করে দেয়। এসব অবৈধ দখলদার আমরা রাখি না। আমি সেনাবাহিনীকে বলবো তারা যেনো অচিরেই এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেয়।