বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আজ বৃহস্পতিবার | ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home » Slider »

বাবা-মায়ের কবরে শ্মশানের মাটি দেখে কাদলেন সাংসদ শামীম ওসমান!

সোমবার, ০৯ আগস্ট ২০২১ | ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

বাবা-মায়ের কবরে শ্মশানের মাটি দেখে কাদলেন সাংসদ শামীম ওসমান!

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান অভিযোগ তুলে বলেছেন তার দাদা, বাবা, মা, ভাইয়ের কবর সংস্কারের নামে শ্মশানের মাটি মুসলমানদের দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি ব্যথিত ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি, এবং সেই সাথে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই মাটি সরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন এ এমপি।

তিনি জানিয়েছেন, আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাতে আমাকে আমার পরিবারের সকলকে ধৈয্য ধরার শক্তি দেন।

আমি গত ২৭ জুলাই আলী আহম্মদ চুনকা সাহেবের স্ত্রী মমতাজ বেগমের কবর জিয়ারত করতে এসেছিলাম,তখন দেখেছি শ্বশানের সংস্কার কাজ চলছে। ওই খানটায় মাটির স্তুপ করা আছে। তখন আমার দাদা, আব্বা, আম্মা, ভাইয়াসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল।

এখন দেখা যাচ্ছে এই জায়গা তিনফুট উচু মাটি রয়েছে। এটা নিয়ে আমার প্রশ্ন না। কিন্তু আজকে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সন্তান।

৯ জুন(সোমবার) বাদ যোহর ফতুল্লার মাসদাইরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানে দাদা, বাবা, মা, বড় ভাইয়ের কবর সংস্কারের নামে হিন্দুদের শ্মশানের মাটি দেয়া হয়েছে বলে ক্ষুব্ধ হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে শামীম ওসমান বলেন, মাটির কি এতোই অভাব? আমার বাবা মা ভাই স্বজনদের কবর হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে? তাছাড়া আমার স্বজনদের কবর আমার বা আমাদের অনুমতি ছাড়া আপনি সংস্কার করবেন কেন?এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।

তিনি দু’হাতজোড় করে বলেন, যারা এ কাজটি করছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, দয়া করে আল্লাহর কসম লাগে আমার আর ধৈয্যের পরীক্ষা নিবেন না। কেউ নোংড়া খেলা শুরু করবেন না। আমি কাউকে দায়ী করছি না। তবে যারা এই কাজটা করেছেন তারা আল্লাহর আযাব থেকে ভবিষ্যতে বাচার জন্য কবরগুলো যেই অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। না হলে এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। আর না করলে আমি নিজের হাতে বাপ-দাদার কবর সংস্কার করবো।

এটা কঠিন কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এই কাজটা কাদের। এই মাটিটা মেইন রোডে রাস্তার পাশেও রাখা যেত। এখানে কেন রাখা হলো?

তিনি আরো বলেন, একজন মুসলমান হয়ে কে মানবে তার স্বজনের কবরে হিন্দুদের শ্মশানের মাটি দেয়া হবে। আজকের কবরের পাশে দাড়িয়ে জিয়ারত করার জায়গাটুকুও নাই। এমনভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। এখানে আমাদের সকলের শেষ ঠিকানা, এই ঠিকানাটাকেও ছাড় দিবেন না? যারা এ কাজ করেছে সিটি কর্পোরেশনের, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’

এমপি শামীম ওসমান বলেন, এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।

তিনি বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করবো না। আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশ শয়তানের কাজ। ‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা? কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা-মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।’

সাংসদ শামীম ওসমান অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরকে অবমানননা করা হয়েছে।

এমপি শামীম ওসমান প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা এমন জঘন্য ঘৃণিত কাজ করেছে তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, এমন কাজ করে তাদের কি লাভ হয়েছে। এতে আমাদের কষ্ট আরো বেড়েছে। আমাদের বাবা মা স্বজনদের কবর সংস্কার আমরা করবো, এটা আমাদের কাজ। কিন্তু মুসলমানের কবর শ্মশানের মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া হবে এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা কেউই মেনে নিতে পারে না। আমরাও চাই না কোন মুসলমানের কবরের মাটি শ্মশানে দেয়া হোক।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় (মাসদাইর) কবরস্থান ও শ্মশানের প্রাচীর নির্মাণের কাজ পায় মামুন নামের এক ঠিকাদার করে থাকেন। এ সময় শ্মশানের মাটি দিয়ে শামীম ওসমানের বাবা প্রয়াত একেএম শামসুজ্জোহা, মা নাগিনা জোহা, বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানসহ স্বজনদের কবরে ৩ ফিট মাটি ফেলা হয়।

এ ঘটনায় ঠিকাদার মামুন জানান, শ্মশান সংস্কার, ঘাটলা নির্মান ও বাউন্ডারী দেয়াল নির্মানের কাজ সিটি কর্পোরেশেন থেকে আমি পেয়েছি। কয়েকদিন আগে শ্মশানের পুকুরের পানি সরিয়ে বেজ করার সময় প্রচুর মাটি উঠেছে। কিছু মাটি কবরস্থানের সীমানায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কবরস্থানে দায়িত্বে থাকা লোকজন কবরে দেয়ার জন্য স্তুপ রাখা মাটি নিতে চাইলে আমি নিতে বলি।

এদিকে এমপি শামীম ওসমানের অভিযোগের পর সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেন একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, কবরে নতুন করে যে মাটি দেয়া হয়েছে সেই মাটি আমরা লোকজন দিয়ে সরিয়ে নিয়েছি। এবং ধুয়ে মুছে কবর পরিস্কার করে দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মাটিগুলো শ্মশানের কিনা তা তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাবে না।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন