শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home » Slider »

টানা ৩ বারের মতো নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী৷

রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:৫৬ অপরাহ্ণ

টানা ৩ বারের মতো নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী৷

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও জিতলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ ও ২০১৬ সালের পর এবার টানা তৃতীয়বারের জয়। খেলাধুলার পরিভাষায় ‘হ্যাটট্রিক জয়’। এই আইভী যেন সত্যি অপরাজেয়।
ভোটের ব্যবধান ৬৯ হাজার ১০২। আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১ ভোট। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও ভোটার ও পর্যবেক্ষকদের মতে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জিতেছেন আইভী। অন্যদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তৈমূর। স্বতন্ত্র হলেও তিনিই ছিলেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনানুষ্ঠানিক প্রার্থী। আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও মাঠের বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। নির্বাচনে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সক্রিয়। তবে ভোটের লড়াইটা যতটা হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটির ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সঙ্গে আছে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট গ্রহণ হয়েছে মোট ভোটারের প্রায় ৫০ শতাংশ। ভোট গ্রহণ শুরুর আগ থেকে ভোট গ্রহণের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের বড় লাইন দেখা গেছে। সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। হিসাব অনুযায়ী ইভিএমে ভোট গ্রহণ দ্রুত হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটিতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। অভ্যাস না থাকায় ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে ভোটারদের সমস্যা হয়েছে এবং অনেক সময় লেগেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের লাইনে যারা ছিলেন, তাদের সবার ভোটই গ্রহণ করা হয়েছে।
শিশুবাগে ভোট দিলেন আইভীগতকাল বেলা ১১টার দিকে বাবা আলী আহাম্মদ চুনকার কবর জিয়ারত করে নগরীর শিশুবাগ বিদ্যালয়ে নিজের ভোট দেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক পরিশ্রম করছে। আমি চাই, আরেকটু পরিশ্রম করে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ করা হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জিতবই।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার। ভোট দিয়ে তৈমূর লক্ষাধিক ভোটে জয় পাবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে। আমি আমার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতব।’
তবে বিকেলের দিকে তৈমূর আলম কিছু কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া বা ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ করেন। তবে তার অভিযোগকে আমলে নেননি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই। উনি (তৈমূর) কি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন? লিখিতভাবে অভিযোগ না করলেও এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
পানভক্তর বেকায়দায়
যারা পান চিবান, তাদের অনেকে গতকালের নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়েন। আঙুলে চুনের প্রলেপের কারণে অনেক সময় সাড়া দেয়নি ইভিএম। যে কারণে অনেক জায়গায় ভোট গ্রহণে দেরি হয়। নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলে ভোট গ্রহণে ধীরগতি দেখা যায় সকাল থেকেই। বুথটিতে অন্তত ২০ জনের ভোট প্রদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, একজন ভোটার ভোট দিতে সর্বনিম্ন দেড় মিনিট সময় নিচ্ছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট পর্যন্তও লেগেছে।
সোনারগাঁ থেকে বন্দরের মদনগঞ্জে ভোট দিতে আসেন গৃহিণী ঊর্মিলা আক্তার। বেলা ১১টায় এসে দেড়টার দিকে ভোটকক্ষে ঢুকতে পারলেও ভোট দিতে পারেননি তিনি। বেলা দুইটার দিকে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ভোট না দিতে পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার আঙুলের ছাপ নেয়ার পর ছবিও আসছে। কিন্তু ভোট দিতে পারিনি। কেন পারিনি তা বুঝি নাই।’
ঊর্মিলার ভোটকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘এমন হচ্ছে। আরও পাঁচজনের এমন হয়েছে।’
ওই কেন্দ্রের বাইরে তখন শত শত ভোটার দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ভোটারদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
বেলা তিনটার দিকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৮১ জন ভোটার। মাত্র চারটি কক্ষে আটটি বুথ। এত এত ভোটার আশা নিয়ে ভোট দিতে এসেছেন। ইভিএম স্লো। ভোটাররা নিয়ম বোঝেন না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তারা গোপন কক্ষে গিয়ে সময় নষ্ট করছেন। এমনও হয়েছে একজন নারী একটি ভোট দিতে ২০ পর্যন্ত মিনিট সময় নিয়েছেন। তারা আমাদের সাহায্য চান। গোপন কক্ষে সাহায্য করার নিয়ম নেই। ভোটাররা ভোট দিতে এসে বিরক্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, আমি কিছুই করতে পারছি না।’
আগের হিসাব
২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বহুল আলোচিত ওই নির্বাচনে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি পরাজিত করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম ওসমানকে। আইভী পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। অন্যদিকে শামীম পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ভোটের ব্যবধান ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৩ ভোট। তিনিই বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত নারী মেয়র।
ওই নির্বাচনের মাঝপথে বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। পরে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী শামীমের পরাজয় নিশ্চিত করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রের নির্দেশে তৈমূর ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।
নারায়ণগঞ্জ সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সেই নির্বাচন আগের নির্বাচনটির মতো ততটা উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। ওই নির্বাচনে আইভী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন