সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ সোমবার | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি নিরসনে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম এর নানামুখী পদক্ষেপ

বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি নিরসনে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম এর নানামুখী পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের মাঝে নেতিবাচক ধারণা দীর্ঘদিনের। দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে মানুষের নানামুখী ভোগান্তিসহ একশ্রেণীর অসাধু চক্রের অনিয়ম ও দুর্নীতি যেমন এ সেক্টরে নিত্যদিনের ঘটনা ঠিক সেখানেই একদল সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেবাগ্রহীতাদের মাঝে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে। তাদেরই একজন সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বর্তমানা ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার ও বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন (বিআরএসএ)-এর নির্বাচিত সভাপতি অহিদুল ইসলাম।

ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে অহিদুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগে তিনি গাজীপুর জেলার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রোববার (২৮ মে) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৬ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শফিউল আলম স্বাক্ষরিক এক আদেশে অহিদুল ইসলামকে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়ন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র অহিদুল ইসলাম ২০০৪ সালে ১৮ মার্চ সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জে সাব রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে তার প্রথম পোস্টিং ছিল হবিগঞ্জ জেলায়। এরপর দীর্ঘদিন গাজীপুর জেলার জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী অহিদুল ইসলাম কর্মজীবনের শুরু থেকে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে চাকরি ক্ষেত্রে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।

অহিদুল ইসলাম ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স এবং এম ফিল ডিগ্রী অর্জন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি গবেষণারত। এছাড়াও তিনি এলএটিসি এবং সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্সে অতিথি বক্তা হিসেবে এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জমি রেজিস্ট্রির পর দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে দলিল। সেবাপ্রার্থী চাইলে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। প্রথমবারের মতো সম্প্রতি সেবাধর্মী এমন বিশেষ উদ্যোগ কার্যকর করেছে ঢাকা জেলাধীন সব সাবরেজিস্ট্রি অফিস। অপরদিকে জমি বা সম্পত্তির ক্রেতার মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে অথবা মেসেজ পাঠিয়ে দলিল সরবরাহ করার তারিখ জানিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে এ কার্যক্রম আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম।

অহিদুল ইসলাম বলেন, দলিলের নকল ও মূল দলিল যথাসময়ে দলিলগ্রহীতার হাতে পৌঁছে দিতে আমরা এখন জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর এ সংক্রান্ত রসিদে ফোন নম্বর সংবলিত একটি সিল মেরে দিচ্ছি। যেখানে নির্দিষ্ট একটি মোবাইল নম্বর লেখা থাকছে। দলিলটি কবে নাগাদ সরবরাহ করা হবে, সম্পত্তির ক্রেতা চাইলে সময়ে সময়ে ফোন করে সেটি জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া ভবিষ্যতে আমরা জমির ক্রেতা বা গ্রহীতার ফোন নম্বরও সংরক্ষণ করব। এর ফলে দলিল প্রস্তুত হওয়ার পর প্রথমে মেসেজ পাঠিয়ে দলিল সরবরাহ করার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সরাসরি কল করে জানানো হবে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ছাড়াও জেলার আওতাধীন ২৩টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে কোন কর্মচারী এই কল রিসিভ করবেন, তার নাম, পদবি ও ফোন নম্বরসহ একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে এ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলিল রেজিস্ট্রির ফরমেটে যেখানে গ্রহীতা বা ক্রেতার ভোটার আইডি লেখা হয়, এর নিচের লাইনে মোবাইল নম্বরও যুক্ত করা হবে। তবে যারা ব্যক্তিগত প্রাইভেসির কারণে ফোন নম্বর দিতে চাইবেন না, তাদেরটা যুক্ত করা হবে না। সেখানে লেখা থাকবে ক্রেতা দিতে আগ্রহী নন।

সূত্র জানায়, জমি রেজিস্ট্রেশনের ১১৫ বছরের ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত এর আগে কেউ নেয়নি। বিশেষ করে সবার হাতে মোবাইল ফোনের যুগে এমন উদ্যোগ অনেক আগে নেওয়া সম্ভব ছিল। সময়মতো এটি করা গেলে দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে মানুষের নানামুখী ভোগান্তি অনেকখানি কমে আসত। ১৯০৮ সালে দলিল রেজিস্ট্রি প্রথা শুরু হয়। কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রিসহ এ সেক্টরের বিভিন্ন কাজে শুধু জটিলতা সৃষ্টি করে একশ্রেণির অসাধু চক্র সব সময় নানাভাবে ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। যে কারণে এখনো সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোয় জনগণের প্রাপ্য সেবা পাওয়া নিয়ে নানামুখী অভিযোগ প্রবল। যদিও এ সেক্টরে বেশ কিছুসংখ্যক সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন।

ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম আরো জানান, জনগণের ভোগান্তি দূর করতে তিনি ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স-জুড়ে নানামুখী সেবা চালু করেছেন। সক্রিয় হেল্প ডেস্ক ছাড়াও সেবপ্রার্থীদের বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে গণশুনানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার তিনি এটি করে যাচ্ছেন। তবে এ কাজটি তাকে প্রতিদিনই করতে হচ্ছে। স্টাফদের তিনি বলে দিয়েছেন, যারা যে সমস্যা নিয়ে আসবেন, তাদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর এন্ট্রি করে রাখতে। কোনো কারণে তিনি ব্যস্ত থাকলে তাদেরকে ফোন করে পরবর্তী সময়ে ডেকে আনা হচ্ছে। এজন্য একটি পৃথক রেজিস্টার মেনটেইন করা হচ্ছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে একজন স্টাফকে পাবলিক রিলেশন বা গণসংযোগ রক্ষা করার বিশেষ দায়িত্ব সোমবার অফিশিয়ালি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে তিনি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সারপ্রাইজ ভিজিট করছেন। ঢাকা জেলার আওতাধীন সাবরেজিস্ট্রি অফিস পরিদর্শন করে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি সেটি তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এছাড়াও পুরোনো দলিল ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট ভবনটির উপরের দিকে আরও একতলা বর্ধিত করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া তিনি পুরো বালাম বহি স্ক্যান করে ডিজিটাল অটোমেশনে নিয়ে যেতে চান। এজন্য পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সাবরেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন থেকে একধরনের নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধারণা ভেঙে দিতে আমরা কাজ করছি।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন