রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ রবিবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গল্প ॥ শেষ তৃপ্তি – লেখিকা,তাবাসসুম আক্তার

মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২ | ৩:৩৬ অপরাহ্ণ

গল্প ॥ শেষ তৃপ্তি – লেখিকা,তাবাসসুম আক্তার

গল্প ॥ শেষ তৃপ্তি –
লেখিকা,তাবাসসুম আক্তার

চৈএের শেষ বেলা।মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,ফড়িং গুলো আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে এখানে-সেখানে।প্রকৃতিতে কেমন জানি এক বিষন্নতা।রূপে ভরপুর,তবুও কেনো মন ছুঁতে পারছেনা।কেমন জেনো রিক্ততা!অনুভুতিহীন,শব্দ গোছর এই পৃথিবী।

মসজিদের মাইকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে।পাখি গুলো নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।কর্ম ব্যস্ত মানুষ গুলোর যেন ক্লান্তির অবসান হচ্ছে।তবুও যেন এই দিনের সমাপ্তি নেই।রাত পোহালেই আবার সেই চিরচেনা মাঠ-ঘাটে কর্ম ব্যস্ততায় জীবন চলে যাবে।আহা জীবন,হায়রে জীবন চলছে বিরামহীন।দুঃখ-সুখের লুকোচুরি চলছে নিশি দিন।মুসল্লীরা নামাজের জন্য মসজিদের প্রান্তে যাচ্ছে।আমি আর বাবা একসাথে মসজিদের দিকে রওনা দিলাম।এক কাতারে বসে নামাজ আদায় করলাম।এটা আমাদের বাবা ছেলের নিত্য দিনের রুটিন।কি অদ্ভুত শান্তি মসজিদের প্রান্তে।

দিনের সমাপ্তি।ফজরের পর পরই বাবা আর আমি গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে যাই।পাখির কিচিরমিচির শব্দ, মানুষের ব্যস্ত জীবনের আবারও সূচনালগ্ন হলো।বেশ কিছু দিন হলো বাবার মাঝে কিছু একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।একটু চুপচাপ,উদাসীনতায় থাকে।ছোট বোন,মা,বাবা আর আমি।আমাদের ছোট সংসার।ভালেবাসায় পরিপূর্ণ আমাদের ছোট ঘরটা।প্রশান্তিতে ভরপুর প্রতিটি মুহূর্ত।ছোট ছোট আবদার,অভিযোগ,অভিমান সব মিলিয়ে আমাদের স্বপ্ন কুটির।ভালোবাসার অবয়বে মিশ্রিত।

বেলা ঠিক ১০ টা বেজে গেলো,বাবা রুম থেকে আসার খবর নেই।রুমে বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখি কি সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে বাবা।কতো প্রশান্তির সে ঘুম। আস্তে আস্তে বাবার কপালটায় স্পর্শ করতেই অনুভব করলাম বাবার শরীরটা শীতল।হাতে হাত রাখতেই অনুভব করলাম বাবা নিথর দেহটা বিছানায় পরে আছে।কি নিঃচুপ চারপাশ।কোন শব্দ আমার কণ্ঠ দিয়ে বাহিরে আসছেনা।আজ পৃথিবীটা কেমন শূন্য।হাহাকারে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।আমি মাকে ডাক দিলাম জোড় গলায়।

আমার চিৎকারে প্রতিধ্বনিতে পৃথিবীটা হাহাকারে বিভীষিকাময় হয়ে যাচ্ছে।কি অসম্ভব রকম যন্ত্রণা!দায়িত্বটা বেড়ে গেলো,নতুন সাজে বাবাকে সাজানোর জন্য।কতো সুন্দর দায়িত্ব।আগরবাতির তীব্র গন্ধটা যেন আরো তীব্রটাতর হতে লাগলো।বরই পাতার গরম পানিতে শেষ গোসলের পর বাবাকে সাদা কাফনে নতুন সাজে সাজিয়ে দিলাম।চারপাশে কান্নার প্রতিশব্দ।

মসজিদের কোন থেকে ধুলোর আস্তরে জমা থাকা খাটিয়া পরিষ্কার করা হলো।সজ্জিত খাটিয়ায় তোলা হলো বাবাকে।চিরস্থায়ী ঠিকানায় পাঠানোর জন্য।বাবার কাঁধে মাথা রেখে কতো রাত ঘুমিয়েছি।হাতে হাত রেখে কতো মসজিদের প্রান্তে ছুটে চলেছি।সেই কাঁধে আজ বাবার লাশ নিয়ে শেষ ঠিকানায় উদ্দেশ্যে রওনা দেবার পালা ।সন্তানের কাঁধে বাবার লাশ কতো দায়িত্বের কাজ আজ পালন করতে যাচ্ছি।জানাজায় শরীক হবার জন্য একে একে মানুষ জড়ো হচ্ছে।

আযান বিহীন শেষ নামাজে আমি বাবার ঠিক পিছনের সারিতে শরীক হতে যাচ্ছি।সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরটা প্রস্তুত।কতো সুন্দর বাবার চিরস্থায়ী ঘরটা।খুব সর্তকার সাথে আস্তে ধীরে কবরে নামানো হচ্ছে বাবাকে।চিরস্থায়ী ভাবে রেখে একের পর মুঠো ভরা মাটিতে পরিপূর্ণ একটা ঘর গড়ে দিলাম।একে একে সবাই চলে যাচ্ছে।কতো সুন্দর সমাধি।

নতুন এক জগৎতের অপেক্ষা।কেমন হবে সেই জগৎ?বাবার জন্য কি নির্ধারিত আছে?কেমন হবে মাঠির সেই চাপ?কি জবাব দিবে মুনকার নাকিরে?এতো শতো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।নিজেকে সামলিয়ে আমি সোজা মসজিদের প্রান্তে চলে গেলাম।

জায়নামাজটা বিছিয়ে এক মনে সিজদায় গিয়ে বাবার জন্য তৃপ্তিসহ সারাজীবনের জন্য দায়িত্ব নিলাম ৫ ওয়াক্ত নামাজের শেষে আত্মতৃপ্তির স্বরূপ তাকে মোনাজাতে রাখার।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন