শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home » Slider »

কর্তব্যপরায়ণ ও মানবিকতায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান

বুধবার, ২৮ এপ্রিল ২০২১ | ১২:২২ অপরাহ্ণ

কর্তব্যপরায়ণ ও মানবিকতায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান

স্টাফ রিপোর্টারঃ ভাল মন মানসিকতা , বিচার বুদ্ধি, মূল্যবোধ ও উদার মন , ইচ্ছা শক্তি এবং দায়িত্ব কর্তব্যকাজে মনোযোগী হওয়া, তার অধিনস্তদের কর্তব্যকাজে একদিকে কড়াকড়ি শাসন অন্যদিকে ভালবাসা দেওয়া নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করাটা খুবই কঠিন কাজ। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যে এ কাজ গুলো করে তার ইউনিটকে জ্ঞ্যানোর মাধ্যমে শৃঙ্খলভাবে রাখতে পারেন তিনিই হচ্ছেন কর্তব্যপরায়ণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী।

সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করা এবং মূল্যবোধের মাধ্যমে মানুষের প্রতি অতি সহজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই হচ্ছে মানবিকতা। মানবিকতার মূল মন্ত্র হচ্ছে মানুষের কল্যাণ, জাতির কল্যাণ, সমাজের কল্যাণ, সাংস্কৃতিক কল্যাণ মোট কথা মানুষকে ভালভাবা আপন করে নেওয়া, মানুষের জন্য ভালা কিছু করা এবং মানুষের উন্নতি সাধন করার নামই মানবিকতা।

গত বছর করোনার কারণে ৬৬ দিন দেশে লকডাউনের সময় অনেক পুলিশকে দেখেছি তাদের ব্যক্তিভাবে অসহায় গরীব মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে। মানুষের সেবা করতে গিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবির মতো বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য করেনানায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। দীর্ঘ ৩০ বছর সাংবাদিকতা জীবনে আমার চোখে অনেক কিছুই দেখেছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি মানবিকতা, অমানবিকতা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, কঠোরতা ,ও ভালাবাসা দেয়া। আজকের এ লেখাটি বলতে পারেন পুলিশকে নিয়ে ।

পুলিশ সদস্যরা দিন রাত মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতন্দ্রপ্রহরীর মতো কাজ করে। জনগনের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা আমাদের সেবা দিচ্ছে বলেই আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি, চলতে পারছি, কর্মজীবনে , ব্যবসা বাণিজ্যে সবকিছুইতেই বলতে গেলে স্বাধীনভাবে চলছি। শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পেশাদারিত্ব দিয়ে অপরাধ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। সমস্যা বিপদ আপদ হলেই আমরা পুলিশের সাহায্য নিচ্ছি। পুলিশ এসে আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। মানুষের শেষ ভরসা স্থলও হচ্ছে পুলিশ। আবার কোন কোন মানুষের ব্যক্তি স্বার্থহানি হলে পুলিশ নিয়ে বিরুপ মন্তব্যও করে থাকেন হরহামেশা, হয়তো না বুঝে না শুনে নিজের স্বার্থ না পেয়ে এটা করে থাকেন যা মোটেই সমীচিন নয়। পুলিশের হাতে গোনা দু একজন সদস্যের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর বদনাম কোনভাবেই হতে পারেনা। হাতে গোনা দু একটা ছিটেফোটা ও বিচ্ছন্ন ঘটনার জন্য পুলিশ ও পুলিশকে আইনের দিক দিয়ে কোভাবেই ছাড় দেয়না যেটা আমরা অবলোকন করছি। একটু চোখ মেলে খুঁজলেই দেখতে পারি পুলিশের অসংখ্য সুনাম খ্যাতি এবং অবদান রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবেনা। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা। দীর্ঘ ৯ মাস জুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ।

যুদ্ধে ১২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলে দেখতে পাওয়া যায়। একজন ন্যায় নিষ্ঠাবান কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ অফিসার হিসেবে ব্যতিক্রম নন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামানও। গত ৪ মাস পূর্বে গাজীপুর রিজিয়ন পুলিশের কাঁচপুর হাইওয়ে থানায় উপস্থিত হয়েছিলাম এক গরীব মানুষের একটা ব্যাটারি চালিত রিকশা ছাড়াতে। যার রিকশাটি তার ঘরে বৃদ্ধ মা বাবা এবং তার স্ত্রী ও দুটি ছোট ছোট প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে । রিকশার চালিয়ে ৬ জনের ভরন পোষণ চালায়। রিকশা চালক পায়ের সমস্যার কারণে অন্য কোন কাজ করতে পারেননা। শারীরিকভাবে তিনিও প্রতিবন্ধী। বিকেল বেলা রিকশা চালকের বৃদ্ধ মা ও বাবা হাজির হয় আমার বাসায়,আমাকে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা থেকে রিকশাটি ছাড়িয়ে আনার জন্য অনুরোধ করলেন।

বৃদ্ধ মানুষ দুটির অনুরোধক্রমে আমি সন্ধ্যার পর কাঁচপুর হাইওয়ে থানার নবাগত ওসি মনিরুজ্জামান এর কক্ষে প্রবেশ করলাম তার সাথে পিরিচিত হওয়ার পূর্বেই (আমি একজন সংবাদকর্মী) কাঁচপুর হাইওয়ের এক সার্জেন্টের মোটর সাইকেলকে এক বৃদ্দ ইজিবাইক চালক পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে মোটর সাইকেলের পিছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ইজিবাইক ও মোটর সাইকেল রাস্তার মধ্যে উল্টে যায়। ইজিবাইক চালক শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হন।

সার্জেন্ট ইজিবাইকটি আটক করে বৃদ্ধ চালককে থানায় নিয়ে আসেন ওসি মনিরুজ্জামান এর সামনে। সার্জেন্টের কথা শুনে ওসি সাথে সাথে সার্জেন্টকে বললেন বৃদ্ধ লোকটিকে নিয়ে আগে ডাক্তার দেখান, বৃদ্ধ লোকটি এ সময়ে ওসিকে বলেন স্যার আমার কাছে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই স্যার আমার গাড়িটা ছাইড়া দেন ঘরে আমার অসুস্থ স্ত্রী, ২ টি মেয়ে চাল না নিয়ে গেলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে হবে আমার কোন ছেলে নেই। এ কথা শুনে ওসি বলেন অফিসারের সাথে ডাক্তারের কাছে যান আপনি চিকিৎসা নিয়ে আসেন কোন টাকা লাগবেনা টাকা আমরা দেব, আপনি ডাক্তার দেখিয়ে এসে গাড়িটি নিয়ে যাবেন থানায় কোন টাকা লাগেনা গাড়ি ছেড়ে দেব।

এ কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি সালাম দিয়ে সার্জেন্ট এর সাথে ডাক্তারের কাছে চলে গেল, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কিছুক্ষণ পর ফিরে আসার পরই গাড়িটি ছেড়ে দিয়ে ওসি মনিরুজ্জামান বৃদ্ধকে বললেন মহাসড়কে থ্রী হুইলার ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশা চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ তাই আর মহাসড়কে উঠবেননা। থানার কোন পুলিশ কোন টাকা দাবি করেছে কিনা তাও ওসি জানতে চান ওই বৃদ্ধ চালকের কাছে, উত্তরে চালক বললেন না স্যার কোন স্যারে টাকা চায়নি। বৃদ্ধ গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পর আমার পালা, তার সাথে আমার পরিচয় হওয়ার পূর্বমুহুর্তে থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান হাসি দিয়ে তিনি আমাকে বললেন ভাই বলেন আপনাকে কিভাবে সেবা দিতে পারি অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি ,আমার পরিচয় না দিয়ে আমি যে জন্য গিয়েছি তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি আমাকে বললেন, রাতে রিকশা ছাড়া যাবেনা, রাতে কোন গাড়ি ছাড়া হয়না, রাতে গাড়ি ছেড়ে দিলে অহেতুক বদনাম হবে আমাদের, তাই সকালে রিকশা চালককে একটি স্ট্যাম্প ও ছবিসহ থানায় পাঠিয়ে দেবেন কোন টাকা লাগবেনা।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন