শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শুক্রবার | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নীশিকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা-প্রেতাত্মা (২য় পর্ব):এমডি বাবুল ভূঁইয়া

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নীশিকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা-প্রেতাত্মা (২য় পর্ব):এমডি বাবুল ভূঁইয়া

নারায়ণগঞ্জের ডাক.কম ; ডাক্তার পরশকে দেখে বললো সে আরো কয়েকঘন্টা আগেই মারা গেছে। কথাটা শোনার পর আসাদ ও তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাশ স্তব্দ হয়ে গেছে। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে পরশ সবার বড়। ছেলে হারানোর শোক সহ্য করতে না পেরে আসাদের স্ত্রী পাগলের মতো হয়ে গেলো। পরশের মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেকেই দায়ী করছে। তার স্বাভাবিক হতে মাস তিনেক লেগে গেলো। এরমধ্যে নীশিকে সবাই আপন করে নিলো। বিশেষ করে মেঝো ছেলে তাপসতো নীশিকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে প্রচন্ড রকম ভাব। নীশিও তাপসকে ছাড়া অন্য কিছু বুঝেনা। কিছুদিনপর আসাদ তার স্ত্রীকে বললো ঢাকায় যাবে। এই তিন মাসে ঘরে বসে থেকে জমানো টাকা সব শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই লোকদের কাছে পাওনা টাকা গুলো পেলে সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসবে। আসাদ প্রচ্ছদের কাজ করে। ছেলের মৃত্যুর কথা শোনলে কেউ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেনা। কথামতো পরেরদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়না হয়ে গেলো। সবাই আসাদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ছেলে হারানোর কস্ট মুছার জন্য শান্তনা দিলো। সাথে আরো প্রচ্ছদের বেশকিছু কাজ পেলো। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসাদ তার স্ত্রীকে বলরো চারদেওয়ালের ভিতর থেকে ছেলে-মেয়ে গুলো একঘেয়েমি হয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে পাশের গ্রামের তল্লাটে ঘুরে আসলে ভারো হয়। সেখানে একটা বড় দিঘী আছে। তারপাশেই মস্ত বড় আম বাগান। সেখানে একটা পিকনিক করলে ভালো হবে। তার স্ত্রীও তাতে রাজি হয়ে গেলো। একদিন সকালে সবাইকে নিয়ে আসাদ তল্লাটে গেলো। ছেলে-মেয়ে গুলোকে দুরে যেতে নিষেধ করলো। খাবারের সময় সবাইকে ডেকে আনলো আসাদ। তাদের সাথে আসাদের ফুপুও গিয়েছে। ফুফু তাদের বাড়িতেই থাকে। কিন্তু নীশিকে সবাই আপন করে নিলেও ফুফু মোটেও দেখতে পারতোনা। পরশের মৃত্যুর জন্য নীশিকে সে দায়ী করে বলে মেয়েটা একটা প্রেতাত্মা। তার কথাকে সবাই তেমন গুরুত্ব দিতোনা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাচ্চা গুলো যারযার মতো খেলা করতে থাকে। আসাদের ছোট দুই মেয়ে রুমা এবং ঝুমা একসাথে খেলছে আর তাপস আর নীশি খেলা করছে একসাথে। তাদের দুরে যেতে বারবার আসাদ নিষেধ করেছে। হঠাৎ আসাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রুমা এবং ঝুমা কোথায় যেন চলে গেলো। সবাই মিলে বাগানের চারপাশ খোঁজতে লাগলো। তখন তাপসকে বলে গেলো নীশিকে যেন সে দেখে রাখে। তারা দীঘির পাশেই খেলা করছিলো। ছোট হলেও তাপস কিন্তু সাঁতার পারে। অনেক খোঁজাখোঁজির পর একটা গাছের আড়াল থেকে আসাদ ঝুমার কান্নার শব্দ শোনতে পেলো। দৌঁড়ে গিয়ে দেখে ঝুমার হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। রুমা কান্না ঝড়িতে কন্ঠে বললো, বাবা আমি ঝুমাকে মারিনি। সে হারিয়ে যাবে ভেবে আমি তার সাথে সাথে এসিছি। আসাদ জানতে চাইলো কিভাবে হাত কাটলো? বললো একটা মেয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে চলে গিয়েছে। আসাদের স্ত্রী মেয়েকে কোলে নিয়ে হাত বেধে দিলো। তখনই দীঘির পারে অনেক লোকের চেঁচামেচি শোনে আসাদ এবং তার স্ত্রী এগিয়ে গেলো। সবাই বলছে একটা ছেলে এবং মেয়ে পানিতে পরে গিয়েছে। শোনেই আসাদ তাকিয়ে দেখে তার ছেলে তাপস আর নীশি নেই। ওরা দীঘির পারেই খেলা করছিলো। নীশিকে ভাসতে দেখে আসাদ দেরি না করে দীঘিতে লাফিয়ে পড়লো। সাঁতরে গিয়ে নীশিকে পারে তোলে আনলো। পেটে চাপ দিতেই নীশির পেট থেকে গরগর করে পানি বের হলো। কিছুক্ষণপরই সে চোখ মেলে তাকালো। অল্প কিছু পানি খেয়েছিলো। কিন্তু তাপস কোথায়? তাপস-তো সাঁতার দিতে পারে। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। আসাদ ডোবে ডোবে পানিতে তাপসকে খোঁজতে লাগলো। হঠাৎ একটা হাত আসাদের হাতে লাগলো। টান দিয়ে পারে আনতেই দেখলো তাপস। তাড়াতাড়ি পেটে চাপ দিতে লাগলো। মুখে ফুক দিলো। কিন্তু তাপস কোন কথা বলছেনা। মুখমন্ডল একদম সাদা হয়ে গিয়েছে। নিথর হয়ে পড়ে আছে দেহটা। দেখে মনে হচ্ছে কেউ দীঘির পানিতে কেউ চুবিয়ে মেরেছে। কান্নাকাটির রোল পড়ে গেলো। এক ছেলের মৃত্যুর শোক শেষ না হতেই আরেক ছেলের মৃত্যু শোক কি করে তারা সহ্য করবে। তাপসের মৃত্যু শোকে আসাদের স্ত্রী দীর্ঘদিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো। আসাদ তখন নিজেই স্ত্রীকে খাইয়ে পরিয়ে দিয়েছেন। সেদিনের পর থেকে তার ফুফু আরো বেশি করে নীশির উপর ক্ষেপে গেলো। কিছুতেই নীশিতে তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। কিন্তু আসাদ ফুফুকে বারবার বুঝিয়েছে একটা অবুঝ ছোট মেয়ে..সে কি আর বুঝে। তাকে দোষ দিয়ে কি লাভ? আস্তে আস্তে বছর খানিক পর আসাদের স্ত্রী সুস্থ্য হয়ে উঠলো। দুই ছেলের মৃত্যু শোক ভুলতে তার কস্টই হয়েছে। ঝুমা প্রায় সময় তার মাকে বলতো নীশি তাকে মেরেছে। কিন্তু তার মা বিশ্বাস করতোনা। এতো ছোট মেয়ে কি করে ঝুমাকে মারবে? উল্টো তিনি ঝুমাকেই বকাঝকা দিতেন। প্রায়ই ঝুমা একা একা কান্না করতো। তার মা জিজ্ঞেস করলে বলতো নীশি মেরেছে। তবুও তিনি পাত্তা দিতোনা। একদিন নীশিকে কান্ন করতে দেখে আসাদের স্ত্রী ঝুমার কাছে জানতে চাইলো নীশি কাঁদছে কেন? ঝুমা বললো মা আমাকে নীশি অনেক মেরেছে । দেখো আমার দু’হাত কেটে দিয়েছে। সে শুধু শুধু কাঁদছে। তোমাকে বললেতো বিশ্বাসই করোনা। তারজন্য উল্টো ঝুমাকেই বকনি খেতে হয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনায় সবাই মিলে… লেখক- সাংবাদিক এমডি বাবুল ভূঁইয়া




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন