সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ সোমবার | ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এক অবহেলিত ভাষা সৈনিক ও গুণীজন ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া!

রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৬:৪২ অপরাহ্ণ

এক অবহেলিত ভাষা সৈনিক ও গুণীজন ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া!

জামান ভূঁইয়া

ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাংলার স্বাধীন সুলতান ঈসাখাঁর রাজধানী , মেঘনা নদীর কাজল কালো জল বিদৌত শস্য-শ্যামল ভূমি হাজারো রকমের গাছগাছালি ঘেরা নিবিড় ছায়া শীতল এক মনোরম পরিবেশ , প্রকৃতির দান যেন শান্তির নীড় সোনারগাঁও , বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সোনারগাঁও উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দ পুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিক্ষ্যাত ভূঁইয়া পরিবারে ১৯২৩ খৃষ্টাব্দের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান । হোসেন । কেউ কি সেদিন জানতো যে সেই মনির হোসেনই একদিন মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে বাংলার অহংকার হয়ে চমক লাগিয়ে দিবেন , আর বিশ্ব মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করবেন । ছায়া ঘেরা মেঠো পথ, নিবিড় অজো পাড়া গাঁয়ে জন্মেও বিশ্বের ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করবে ? (মনির হোসেন) পরবর্তীতে আ স ম নূরুল হক পিতার নাম মৌলভী সাহাবদ্দীন ভূঁইয়া । মৌলভী সাহাবদ্দীন ভূঁইয়ার ছিল ছয় ছেলে এবং এক মেয়ে । ছেলেদের মধ্যে নূরুল হক ভূঁইয়া ছিলেন চতুর্থ । বড় ভাই রমিজদ্দীন ভূঁইয়া ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র । তিনি পড়াশোনা করার সাথে সাথে ভাই নূরুল হক ভূঁইয়াকেও স্থানীয় প্রথমীক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন । আর তখন থেকেই মনির হোসেন থেকে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় নূরুল হক ভূঁইয়া । নূরুল হক ভূঁইয়া সেই ছোট বেলা থেকেই খুব নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিলেন । পড়া লেখায় মেধাবী এবং নম্র-ভদ্র হওয়ায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকগন অতি আদর যত্ন করতেন তাঁকে । প্রতি ক্লাসে প্রথম হতেন তিনি সব সময় ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে পাশের ইউনিয়ন জামপুরের মহজমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন নূরুল হক ভূঁইয়া । মহজমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে ডিস্ট্রিংশন সহ প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন । ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে আই এস সি , ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে বি এস সি (অনার্স ) এবং ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে এম এস সি পাশ করেন । উল্লেখ্য যে, নূরুল হক ভূঁইয়া এন্ট্রান্স পাশ করার পর যখন তিনি ঢাকা জগন্নাথ জলেজে ভর্তি হন , তখন বাবা সাহাবদ্দীন ভূঁইয়াই তাঁকে কলেজে ভর্তির অনুমতি দেন । তবে বাবা সাহাবদ্দীন ভূঁইয়া একজন পীর ভক্ত ধর্ম প্রান মুসলমান হওয়ার কারনে , ইংরেজি পড়া নিয়ে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তখন ।
ডঃ আ স ম নূরুল হক ভূঁইয়া ১৯৪৬ খৃষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন । ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়ার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন , তা হলো তাঁর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চেতনাবোধ । ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন । পাক-ভারত স্বাধীন তা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী পর্যায়ে মহান ভাষা আন্দোলন ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নূরুল হক ভূঁইয়া প্রত্যক্খভাবে অংশ গ্রহণ করেন । পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় মাস পর অর্থাৎ ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দের ১ অক্টোবর যখন “রাস্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ ” গঠন করা হয় , তখন নূরুল হক ভূঁইয়াকেই প্রথম আহ্বায়ক করা হয় । তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ” তমুদ্দুন মজলিস ” এর প্রতিষ্ঠতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক । যে ক’জন ভাষা আন্দোলনে অগ্রসেনানী হিসাবে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন , তাদের মধ্যে নূরুল হক ভূঁইয়া ছিলেন অন্যতম ।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ততকালীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ঢাকার সিদ্দিক বাজারের ” লিলি কটেজ ” এ রমিজউদ্দীন ভূঁইয়ার বাসায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । যেখানে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগনও উপস্থিত ছিলেন । সে দিন এই ঘরোয়া আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন , ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী , নূরুল হক ভূঁইয়া , আবু জাফর শামসুদ্দিন , মোঃ তোয়াহা, অলি আহমদ , অধ্যাপক আবুল কাসেম সহ আরো অনেকে । সেদিন নূরুল হক ভূঁইয়া এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম সাহেবের উত্থাপিত রাস্ট্রভাষা বিষক কথা অন্য কেউ শুনতে না চাইলেও , তাঁরা রাস্ট্রভাষার কথা সবার নিকট উপস্থাপন করেছিলেন ।
কিছু দিন পরে বাংলাকে রাস্ট্রভাষা করার এবং এ আন্দোলনকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নূরুল হক ভূঁইয়া এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম এর উদ্যোগে ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর “তমুদ্দুন মজলিশ ” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন করা হয় । তখন “তমুদ্দুন মজলিশ ” এর সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নূরুল হক ভূঁইয়াকে । “তমুদ্দুন মজলিশ ” গঠনের পিছনে যারা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তারা হলেন নূরুল হক ভূঁইয়া , শাসুল আলম , আবদুল গফুর , এ কে এম আহসান , আবুল কাসেম এবং সানাউল্লাহ নূরী সহ আরো অনেক ছাত্র শিক্ষক ।
এই ” তমুদ্দুন মজলিস ” এর মাধ্যমেই মূলত বাংলা ভাষা আন্দোন শুরু হয় । পরে ১৯৪৭ খৃস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ভাষা আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো বিল্ডিং অর্থাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজের পূর্ব দিকের দোতলায় একটি রুমে আলোচনায় বসেন । সেখানে জনাব নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে ” রাস্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ” গঠন করা হয় । অন্য যারা এই সংগঠনের সদস্য হন তারা হলেন , জনাব সামসুল আলম , জবাব আবদুল খায়ের , জনাব নাইমদ্দীন আহমদ , জনাব আজিজ আহমদ , জনাব আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী , জনাব অলি আহাদ , অধ্যাপক আবুল কাসেম । এ সময় সরদার ফজলুল করিম সদস্য না হয়েও ভাষা আন্দোলনকে সফল করতে সব সময় পরামর্শ দিতেন । তখন কমিটিতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সভাপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের সহ-সভাপতি হিসেবে জনাব তোয়াহাকে ” রাস্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ” কমিটিতে রাখা হয় । পরবর্তীতে তারা সবাই মিলে এবং ” তমদ্দুন মজলিস ” এর সদস্যগন বিভিন্ন হলে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন । ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দের ২৯ ফেব্রুয়ারী ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যারা গ্রেফতার হন তাদের মুক্তি এবং পুলিশী জুলুম অত্যাচারের নিরেপক্ষ জন্য দাবি তোলা হয় । আর তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় সারা পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র বাংলাকে রাস্ট্রভাষার মর্যাদার লড়াই । ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ খৃষ্টাব্দের ২১ আগস্ট মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার মর্যাদার জন্য লড়াই করে শহীদ হন সালাম , বরকত , রফিক ও জব্বারের মত বাংলা মা’য়ের অমূল্য সম্পদ কিছু তাজা প্রান ।
সেই থেকেই শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন । পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ খৃষ্টাব্দে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা- বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করে আজকের এই বাংলা দেশ ।
ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়ার কত বড় অবদান বাংলা ভাষার জন্য , তা এখন কেউ উপলব্ধি করতে পারে না । বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িয়ে থাকতেন । কিন্তু , তিনি ছিলেন প্রচার প্রচারণায় একেবারেই বিমুখ ।ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া দীর্ঘ ৩৭ বছর পর ১৯৮৪ খৃষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন । ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দে কমনওয়েলথ বৃত্তি এবং ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে পাকিস্তান এটমিক এনার্জি কমিশনের ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হওয়া সত্বেও দেশাত্মবোধের প্রতি অনমনীয় মনোভাব এবং বিদেশি ডিগ্রির প্রতি অনীহা প্রকাশ করে তা প্রত্যাখান করেন । ভাষা সৈনিক ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া এত কিছুর পরও নিজ গৃহে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন । প্রাসঙ্গিক কারনে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তিনি পাটের অগ্নিরোধক মিশ্রণ উতপাদন প্রণালীর তত্ত্ব আবিস্কারের পর তার সফলতা প্রত্যক্খ করেছেন এবং প্রশংসা করেছেন বাংলা দেশ সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী ১৯৭৩ খৃষ্টাব্দে , যার সচিত্র খবর তখন প্রকাশিত হয়েছিল দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবনে রসায়ন বিগ্ঙানের ” স্টাডিজ অন মেটাল সালফাইড ” শিরোনামের গবেষণা কর্মের সফল স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন ।
ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া ১৯৭৭ খৃষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেন একজন বিগ্ঙানীর । তিনি একজন উঁচু মানের লেখকও ছিলেন । তাঁর গবেষণাধর্মী নিবন্ধ হচ্ছে – পাট খড়ি থেকে জাইলোজ , পিরাইটীজ সহযোগে এ্যামোনিয়াম সালফেট সার , বর্জ্য জিপসাম থেকে কার্বন – ডাই সালফাইড উতপাদন প্রণালী । আরো বলা যায় ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক ( সম্মান ) , স্নাতকোত্তর শ্রেণির জন্য মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম বই লিখেছেন – ” শিল্প রসায়ন ও রসায়ন প্রযুক্তি “।
ডঃ নুরুল হক ভূঁইয়া জীবদ্দশায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেগেছেন । তিনি বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী উচ্চ বিদ্যালয় , মহজমপুর উচ্চ বিদ্যালয় , মাঝেরচর উচ্চ বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে সুনামের সাথে দ্বায়িত্ব পালন করেন । ভাষা সৈনিক ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া বৃহত্তম ঢাকা জেলা সমিতির সহ-সভাপতি , সোনারগাঁও সমিতির সভাপতি , নারায়ণগঞ্জ মহকুমা’র সেবা সমিতির সদস্য , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্য , বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক , স্যার এ এফ রহমান হলের প্রথম প্রভোস্ট সহ বিভিন্ন হলের হাউজ টিউটর , জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন আমন্ত্রিত শিক্ষক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজের পরিচালনা পরিষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি , ১৯৮০ খৃষ্টাব্দে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি , পূর্ণিমা বাসর ( কবি বেনজির আহমদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ) এর সদস্য , বাংলা দেশ ঈমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে একজন সমাজ হিতৈষীর ভূমিকা পালন করে গেছেন । ১৯৮০ খৃষ্টাব্দে ভাষা সৈনিক ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন ।
ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া একজন পুরোপুরি ধর্মপ্রান মুসলমান ছিলেন । তিনি যখন তাঁর গ্রামের বাড়ি ঐতিহাসিক সোনারগাঁওয়ের গোবিন্দপুর আসতেন, তখন গ্রামের ছোট বড় সবাই তাঁর নিকট থেকে , কোরআন হাদিসের বয়াান শোনতেন । নূরুল হক ভূঁইয়া একজন বড় মাপের সমাজ সেবক ছিলেন । তিনি গ্রামের অসহায় মানুষের দুঃখ কস্টে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন । মসজিদ মাদ্রাসায়ও তাঁর অবদান রয়েছে প্রচুর ।
আজ তাকে নিয়ে নতুন করে লিখতে হয় । দুঃখ লাগে মনে, যে মানুষটি এত ত্যাগ স্বীকার করে বাংলা ভাষার জন্য কাজ করে গেলেন , যেই ব্যক্তিটি দেশ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেলেন , তাঁর জন্য জাতি বা দেশ কিছুই করতে পারলোনা । শেষে বুকে বিশাল বেদনা নিয়েই বার্ধক্যজনিত কারনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দের ২ এপ্রিল নিজ বাসভবন ঢাকার লালমাটিয়ায়। ভাষা আন্দোলনের অগ্র সৈনিক হয়েও জাতির কাছ থেকে কোন মর্যাদা পেলেননা আজো পর্যন্ত । সারা দেশে ভাষা সৈনিকদের কবর গুলো সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করা হলেও , বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কাতারের সৈনিক হয়েও ভাষা সৈনিক ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া শুইয়ে আছেন অবহেলা আর অযত্নে সোনারগাঁও উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দ পুর গ্রামের এক কোণে তাঁর মা-বাবার পাশের । মাঝে মধ্যে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কবর খানা পরিস্কার করে জিয়ারত করা হয় । ভাষা সৈনিক ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়াকে নিয়ে স্হানীয় ভাবে তাঁর ভাতিজা কবি সাংবাদিক জামান ভূঁইয়া বিভিন্ন পত্র পত্রিকা এবং সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার করলেও এ পর্যন্ত কোন সারা মেলেনি সরকার অথবা তেমন কোনো সংগঠনের । তাঁর পরিবারের দাবি , ভাষা সৈনিক হিসেবে যেন ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া’কে জাতীয় পর্যায়ে সম্মান দেখানো হয় । ভাষা সৈনিক হিসেবে ডঃ নূরুল হক ভূঁইয়া এর নামে একটি রাস্তার নামকরণ করারর দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই সোনারগাঁও উপজেলাবাসী করে আসছেন ।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন