বিশেষ প্রতিনিধি :
উন্নয়নের নামে এক ইঞ্চি কৃষি জমিও নষ্ট করা যাবে না। এমন নির্দেশনা রয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। অথচ প্রতিদিন শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট করছে ইটভাটা মালিকরা, যেন পরিবেশ ধ্বংস করাই তাদের কাছে নিয়ম।
বন্দরে থানার ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাটি খেকো মাসুমের নেতৃত্বে ভেকু দিয়ে রাত দিন মাটি কেঁটে নিয়ে যাচ্ছেন ইট ভাটায়। মাটি কাঁটতে কাঁটতে বাখরাবাদ দিয়ে যে তিতাশ গ্যাসের লাইন এসেছে সেই বড় লাইনও বের করে ফেলেছেন মাটি খেকো চেয়ারম্যান মাসুম। তাদের কিছুই বলা যাচ্ছে না। কিছু বলতে গেলেই চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে মারধরের হুমকি দেয়। অনেকেই তার কথায় নাম মাত্র মূল্যে ক্ষেতের মাটি বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা সাত ভাই তাই আমরা বেঁচে আছি। কথাগুলো অকপটে বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেওঢালা লাঙ্গলবন্দ এলাকার এক স্থানীয় কৃষক। তিনি দাবি করেন, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ কৃষকের জমি থেকে জোরপূবর্ক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। সোনালী ফসলের সকল মাটি কেটে তার ও তার সহযোগীদের ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কেওঢালা জাঙ্গাল এলাকার মত লাঙ্গলবন্দ সহ বিভিন্নস্থানে চলছে মাটি কাটার মহাউৎসব। এতে অনেকাংশেই কমে গেছে কৃষকের ফসলি জমির আবাদ। আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে প্রভাবশালীদের চাপে বিক্রি করে দিচ্ছে নিজের ফসলি জমিটিও। স্থানীয় কৃষকরা বলছে দিনে জমি দেখা গেলেও রাতের আধারেই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাসুম চেয়ারম্যান। নাম মাত্র মূল্যে জমি ক্রয় করে সে জমির মাটিগুলো দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইট খোলাতে। শুধু তাই নয়, কেওঢালা জাঙ্গাল এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে মূল গ্যাস সংযোগ নেয়া সরকারী অধিগ্রহনকৃত জমিটিও রক্ষা পাইনি মাসুম চেয়ারম্যানের হাত থেকে। স্থানীয়দের দাবি দ্রুতই কার্যকরি পদক্ষেপ না নিলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষক এবং এই এলাকার সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে জাঙ্গাল, কেওঢালা, লাঙ্গলবন্দ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আশপাশের জমি থেকে মাটি কেটে ওই ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় ভাটার মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও ভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, পাশে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাকসুদ চেয়ারম্যান তারা দু’জনই মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারাই দিব্বি পকেট ভারীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন ইটভাটার মৌসমে। জোড় করে কৃষকের জমি দখল করে এই দুই চেয়ারম্যান মাটি বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইটভাটা বন্ধ করে জরিমানা করলেও আবার কিছুদিন পর ইট ভাটা চালু করেন মাসুম চেয়ারম্যান। কেওঢালা এলাকার বাসিন্দা আলী হায়দার এই প্রতিবেদককে বলেন, ফসলি জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চেয়ারম্যান মাসুম ও চেয়ারম্যান মাকসুদ। পাশাপাশি মাসুম চেয়ারম্যান সরকারি নিয়ম অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। ইট ভাটার ধুলা আর ধোঁয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম ঘটনার সতত্য শিকার করে বলেন, তিতাস কর্মকর্তা এবং বন্দর উপজেলার নির্বাহি অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাদের কথামত গ্যাস লাইনের পাইপটি পুরনায় মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদককে নিউজটি না করার জন্য অনুরোদ জানিয়ে তার সাথে দেখা করা কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁ শাখার ডিজিএম মেজবা উদ্দিন বলেন, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ম্যাডাম আমাকে ফোন করে জানানোর পর আমি ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠিয়ে জানতে পারি এ গ্যাস লাইনটি জিটিসিএলের। তখন আমি হেড অফিসকে অবগত করি। হেড অফিস থেকে জিটিসিএলের কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারাই এটার ব্যবস্থা নিবে বলে আমি জানতে পারি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষিজমির পাশেই অবৈধভাবে ওই ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে। এ কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে। কৃষিজমির পাশে ইটভাটা হতে পারে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিচালক বলেন, ইটভাটা গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা আবারো এগুলো বন্ধ করে দিবো।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, ‘তদন্ত করে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।