মোঃ মীমরাজ হোসেন,স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ– ইসকন নিষিদ্ধ এবং সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার দাবিতে ‘ঢাকা টু চট্টগ্রাম রোড মার্চ’ করেছে আইনজীবীদের একটি সংগঠন।
শুক্রবার সকালে ঢাকার হাই কোর্ট থেকে ‘ভয়েস অব ল’ইয়ারস অব বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী ও মীরসরাইয়ে পথসভা করেন তারা।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা।
ভয়েস অব ল’ইয়ারস অব বাংলাদেশ-এর মুখ্য সমন্বয়ক আশরাফ-উজ-জামান বলেন, “আমাদের আজ রোড মার্চ করতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা গুজরাটের কসাই মোদীর অনুসারী, তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম থাকতে দিতে চায় না। ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনীর এজেন্ট ইসকন বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
“ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুবিধা নিয়ে তারা সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারা উসকানিমূলক কর্মসূচি পালন করছে।”
তিনি বলেন, “তারা শাহবাগ থেকে রংপুর পর্যন্ত কর্মসূচি করেছে। কলকাতার কিছু মিডিয়া ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে যে, হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।
“অথচ আপনারা জানেন, এদেশে সকল শ্রেণির মানুষ বিশেষ করে, মাদ্রাসার ছাত্ররা পর্যন্ত পূজা মণ্ডপ পাহারা দিয়ে যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখেছে, যার কোনো নজির নেই।”
“আমাদের অনেক হিন্দু-বৌদ্ধ সংগঠন রয়েছে, এরা সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেয় না। অথচ ইসকন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
“ইসকন আমাদের জাতীয় পতাকা অবমাননা করছে। তাদের আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ইসকন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়ে যাব।”
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নাকচ করে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় চট্টগ্রামের হাকিম আদালত।
ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত চত্বরের বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে হত্যার শিকার হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
আশরাফ-উজ-জামান বলেন, “আমাদের পরিবারের সদস্য আলিফকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন তরুণ আইনজীবীকে যেভাবে খুন করেছে, তার পরও কি আমরা বলব না এরা সন্ত্রাসী? আজ আমরা দাবি করছি, ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার, শামসুল আলম ও মো. তাজ।
ইসকন দাবি করে আসছে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কেনো ‘সম্পৃক্ততা নেই’।
বাংলাদেশে ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী গত ২৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চট্টগ্রামের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য ইসকন বাংলাদেশকে ‘অন্যায়ভাবে দায়ী’ করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের ইংরেজি নাম ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল ইসকন। হিন্দু ধর্মগুরু অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকন মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী। বর্তমানে বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারের বেশি মন্দির ও কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশে এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
Show quoted text