রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ রবিবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নুর হোসেনের পথে কাউন্সিলর নুর উদ্দিন, নেপথ্যে থেকেই নিয়ন্ত্রন করছে অপরাধ সাম্রাজ্য

শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০২৩ | ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নুর হোসেনের পথে কাউন্সিলর নুর উদ্দিন, নেপথ্যে  থেকেই নিয়ন্ত্রন করছে অপরাধ সাম্রাজ্য

আলোচিত সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নরঘাতক নুর হোসেনর ভাই কাউন্সিলর মো. নুর উদ্দিন দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। সাতখুনের পর নুর হোসেন কারাগারে যাওয়ার পর তার অপরাধ সাম্রাজ্র্য বিভিন্ন জনের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। গত বছরের ডিসেম্বরে নাসিক নির্বাচনে অংশ নেন মো. নুর উদ্দিন মিয়া। এরপর নির্বচানে জয়ী হতে নানা নাটকীয়তার সৃষ্টি করেন।
কারাগারে থেকেই নুর হোসেন মোবাইল ফোনে এলাকার প্রভাবশালী, সমাজপতি ও বিশিষ্টজনদের হুমকি ধামকি দিয়ে তাই ভাই নুর উদ্দিনকে নির্বাচনে জয়ী করতে বলেন। ওই সময়ে এ বিষয়টি “টক অব দ্যা টাউন” হয়ে উঠে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি ও আতংক সৃষ্টি হয়। এরপর নির্বাচনে ছক পাল্টে যায়, কাউন্সিলর হলেন মো. নুর উদ্দিন মিয়া।
সেই সাথে পাল্টাতে থাকে নাসিক ৪নং ওয়ার্ডের দৃশ্যপট। নুর হোসেনের অবর্তমানে পাঁচ ভাইয়ের অভিভাবক হয়ে উঠে নুর উদ্দিন। নুর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য ফিরে পেতে মাঠে নামেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে নন, নেপথ্যে থেকে ভাই, ভাতিজা স্বজনদের মাধ্যমে প্রতিটি সেক্টরের নিয়ন্ত্রন ফিরিয়ে নিতে ছক শুরু করেন।
নিজে বিএনপির নেতা হলেও আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ার মিশে যান। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উত্তর মেরু ও দক্ষিন মেরুতে বিচরণ শুরু করেন। মেয়র আইভী ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রাণ পুরুষ শামীম ওসমানকে পৃথক পৃথক ভাবে ম্যানেজ করেন। মেয়র আইভীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আবার শামীম ওসমানের ডাকে আয়োজীত আওয়ামী লীগের সভায় ও তিনি উপস্থিত থাকেন।
অপরদিকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী সফল করতে অর্থ ও জনবলের যোগান দিয়ে থাকেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়।
কাউন্সিলর হওয়ার পর নুর উদ্দিন প্রায় সময়ই বিভিন্ন ইস্যুতে থাকেন আলোচনা ও সমালোচনায়। চাঁদাবাজী, মাদকব্যবসা, ভুমিদসু্যুতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা কর্মকান্ডে সমালোচিত নুর উদ্দিন। মেতে উঠেন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে, অবাধভাবে চালু রাখেন নুর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্য।
স্থানীয়রা জানায়, সাত খুনের ঘটনায় নূর উদ্দিন প্রায় দেড় বছর পলাতক থাকার পর এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে নুরু উদ্দিন নেপথ্যে থেকে নুর হোসেনের সকল সাম্রাজ্যই আগের মতই দেখভাল করছেন তার ভাই, ভাতিজাসহ সহযোগীদের দিয়ে।
যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শিমরাইল মোড়ের লেগুনা ও অটো থেকে চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব দেন তারই চাচাত ভাই আনোয়ার হোসেন আনুকে। এখান থেকে আদায়কৃত চাঁদার একটি অংশ চলে যায় নেপথ্যের নায়কের কাছে।
শিমরাইল মোড়ের বদর উদ্দিন সুপার মার্কেটের সামনের সরকারী জায়গা ফুটপাথের উপর দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে । ওই মার্কেটের সামনে থেকেই পুলিশের সোর্স টেম্পু আতিক শিমরাইল যাত্রবাড়ি লেগুনা পরিবহন নুর উদ্দিনের নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। এখান থেকে টেম্পু আতিক নুর উদ্দিনকে মোটা অংকের মাসিক চাঁদা দিয়ে থাকেন।
আরেক ভাতিজা সোহেলকে শিমরাইল পর্হিন থেকে চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হয়। নুর উদ্দিন তারই ছোট ভাই জজ মিয়া ওরফে ছোট মিয়াকে নুর হোসেনের অপরাধ সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র শিমরাইল মোড়ের ট্রাক স্ট্যান্ডের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও চাচাত ভাই আক্তারকে সেক্রেটারি বানিয়ে নির্বিঘ্নে পরিবহন চাঁদা আদায়ের কার্যক্রম চালু রাখেন।
আবার এই ট্রাক স্ট্যান্ডেই অপর চাচাত ভাই দেলোয়ার ও নূর হোসেনের সহযোগী উজ্জলকে মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে সংগঠনের নামে চাঁদা উত্তোলন করে আসছেন। মূলত এখান থেকেই চাঁদার সিংহভাগ আদায় হয়ে থাকে। যা অর্ধ্বকোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর চাঁদার একটি অংশ চলে যায় কাউন্সিলর নুরু উদ্দিনের পকেটে।
ট্রাকস্ট্যান্ড ছাড়াও শিমরাইল মোড়ে পরিবহন সেক্টর ও শীতলক্ষ্যার পাড়ে কাউন্সিলর নুরু উদ্দিনের একচ্ছত্র আধিপত্য। এসব খাত থেকে অবিরাম চাঁদাবাজিতেও শীর্ষে রয়েছে তার লোকজন।
এছাড়া নুরু উদ্দিনের সমঝোতায় এই চাঁদার একটি অংশ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের দুইজন নেতা ও প্রশাসনের এক কর্তা পেয়ে থাকেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকায় জমি কেনা-বেচা করলেই কাউন্সিলর নুর উদ্দিনকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় । ওই এলাকায় বাড়ি ঘর নির্মাণ করতে হলে কাউন্সিলরের মনোনিত লোকদের মাধ্যমে ইটা-বালু ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী বাজার মূল্য থেকে অধিক মূল্যে নিতে হয়। এ সব কর্মকান্ড অবিলিলায় চলমান রাখতে নুর উদ্দিনের ইশারায় গঠন করা হয় একটি কমিটি। ওই কমিটির মাধ্যমেই অনৈতিক ভাবে লাখ লাখ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন নুর উদ্দিন।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব কর্মকান্ড চলমান রাখতে ভাই ভাতিজা ও স্বজনরা ছাড়াও নুর উদ্দিন গড়ে তোলেন ব্যক্তিগত একটি বাহিনী। তার এ বাহিনীর অন্যতমরা হলেন- আব্দুল কাইয়ুম, সালা উদ্দিন, সালামত উল্লাহ, কবির হোসেন সোর্স, মো. হানিফ, মিজান ও ক্উাসার। এদের মধ্যে মূল চালকের ভুমিকায় রয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম। এ বাহিনীর প্রধান হয়ে কাউন্সিলর নুর উদ্দিনের সকল অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন তিনি।
অপর সহযোগী সালাউদ্দির প্রভুভক্ত হয়ে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ক্যাশিয়ার সালাউদ্দিন হিসেবে সকলের কাছে স্বীকৃত। এই দুই প্রভুভক্ত প্রধান কাউন্সিলর নুর উদ্দিনের ছায়াস্বরূপ হিসেবে কাজ করছেন।
সম্প্রতি নুরু উদ্দিন স্ব ক্ষমতায় নিজ জোরবলে ক্যাশিয়ার সালাউদ্দিনকে চিটাগাং রোড রেন্ট-এ-কার মালিক সমিতির সভাপতি ঘোষণা দিয়ে রেন্ট-এ-কার নিয়ন্ত্রন নিতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন ছাড়াই তিনি নিজে ভাতিজা কাউন্সিলর বাদলকে সাথে নিয়ে রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ডে এসে সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও সাইফুলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন এবং বলেন তাদের নির্দেশনায় এ স্ট্যান্ড চলবে।
পরে এ নিয়ে মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বিষয়টি গড়ায় থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে। এ নিয়ে উত্তেজনা চলছে, যে কোনো মুহুর্তে ক্ষমতার আধিপত্যের লড়াইয়ে বড় ধরণের নাশকতা এমনকি প্রাননাশের আশংকা করছেন নিরীহ সাধারণ মালিক-শ্রমিকরা।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নূর উদ্দিন দীর্ঘদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্মা-আহ্বায়ক হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে শতশত ক্যাডার নিয়ে যোগদান করেন নুর উদ্দিন। সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র, নাশকতা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামী নুর উদ্দিন।
এছাড়া কাউন্সিলর নুর উদ্দিন হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। এসব মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।
কাউন্সিলর নুর উদ্দিনের ভাই, ভাতিজা ও সহযোগীদের ছত্রছায়ায় পুরো এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। প্রকাশ্যে একাধিক স্পটে মাদক বেচা কেনা চলছে। মাদকের কারনে ৪ নং ওয়ার্ড এলাকা ছিনতাইকারী ও অপরাধীদের অভযারণ্য হয়ে উঠেছে। এখানে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ঘটছে আইনশৃংখলার অবনতি। একাধিক তাজা প্রান ঝরে পড়েছে ছিনতাইকারীদের হাতে ।
এ সব বিষয়ে কথা বলতে কাউন্সিলর নুর উদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা , রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের দাবি এখনই নুর উদ্দিন, তার ভাই, ভাতিজা ও সহযোগীদের রুখতে র‌্যাব, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দাসহ আইনশৃংখলাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসব সংস্থার উর্ধ্বতন কর্র্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ ও নিরেপক্ষ নজরদারী করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ফের সাত খুনের মতো আরো একটি ঘটনা যে কোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন