সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ সোমবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধন অংশের বনায়ণ নষ্ট করে গরুর হাট

শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩ | ২:০৬ অপরাহ্ণ

সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধন   অংশের বনায়ণ নষ্ট করে গরুর হাট

সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল কবরাস্থনের পর থেকে হিরাঝিল পর্যন্ত ডিএনডি খালের পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন অংশে পরিবেশ রক্ষায় বনায়ণ করা গাছ কর্তন করে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এছাড়াও এ হাটের কারণে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং আবাসিক এলাকার ভিতরে হাট আরও বিস্তৃত হওয়ায় পশুর বর্জে দূর্গন্ধে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দিন শেষ হলেও গভীর রাত পর্যন্ত হাটের মাইকের উচ্চ শব্দে প্রচুর শব্দ দূষণ হচ্ছে। এতে নারী শিশু ও বায়োজৈষ্ঠদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ইজারার আগেই প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে এ হাট চালু হয়। এ হাটে আসতে থাকে গরু। এছাড়া আবাসিক এলাকায় কিভাবে গরুর হাটের ইজারা দেয় নাসিক কর্তৃপক্ষ তা প্রশ্নবিদ্ধ। এলাকার শীর্ষ প্রভাবশালীরা নেপথ্যে থেকে এ হাটের সাথে জড়িত থাকায় কেউ হাট ইজারাদারদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেনা।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জপুল থেকে হিরাঝিল পর্যন্ত বনায়ণ ছিলো। বিকেলে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসতাম। গরুর হাটের কারণে এখন কিছু অংশে গাছ থাকলেও অন্য কোথাও বনায়নের চিহ্ন দেখা যায় না।
পথচারী গার্মেন্টস কর্মী রাবেয়া জানান, ১নং ওয়ার্ডে ইপিজেডসহ বিভিন্ন গার্মেন্টের অনেক শ্রমিক বসবাস করে। অনবরত হাটের শব্দ দূষনে তাদের ঠিকমত ঘুম না হওয়ায় সারাদিন কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকে ঘুম না হওয়ায় অসুস্থবোধ করছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ পুল বাজার থেকে হাতে ভারি ব্যাগ নিয়ে হাটের সামনে দিয়ে হেটে যেতে গিয়ে রাস্তায় ব্যাগসহ পড়ে যান ঈমান আলী নামে ষাটোর্ধ্ব বয়সের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন এ হাটের কারণে দিনারাত অসংখ মানুষের বিচরণ ও যাতায়াত ঘটছে। এতে এ সড়ক দিয়ে রিকশা চলতে চায়না। যাও দু একটা যেতে চায় তাও ভাড়া দুই তিনগুন বেশি চায়। বাধ্য হয়ে কষ্ট হলেও এভাবে যাচ্ছি। মেয়েকে নিয়ে হেটে যাওয়া হেনা নামে এক গৃহবধু জানান, খালের পাড়ের এ হাটকে কেন্দ্র করে রাস্তায় উপর দিনভর যুবক ছেলেদের আনাগোনা থাকে। তারা রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে থাকে। তাই মেয়েকে একা না ছেড়ে নিজেই সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। আমিও পড়ছি বিভিন্ন বিব্রতর পরিস্থিতে। কি করব আমরা বড় অসহায়।
এবিষয়ে কথা বলতে পশুর হাটের ইজারাদা মো. সালামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হাসেন বলেন, এখানে হাট বসলে তো কোন সমস্যা দেখছিনা। সৌন্দর্য বর্ধণ ও গাছ কর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন যেখানে হাট সেখানে এখন কোনো গাছ নেই।
নাসিকের চলমান প্রকল্পে এভাবে পশুর হাট বসানো হয়েছে এতে একজন কাউন্সিলর হিসেবে আপনার ভুমিকা কি হতে পারে বললে তিনি বলেন হাটের কারণে কোন সমস্যা হবেনা।
এছাড়া আবাসিক এলাকায় হাট ও বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই এগুলো কোন বিষয়না। আপনি আসেন দেখা করে যান অথবা কোথায় আছেন বলেন আমি দেখা করি।
খাল পাড়ের হাট বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আযান দিতেছে নামাজ পড়তে যাবো বলে লাইনটি কেটে দেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বাজার কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া আমরা খালপাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন অংশে কোনো হাটের ইজারা দেয়নি। যদি পশুর হাট বসে থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) লেক তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। খালটি উদ্ধার এবং নির্মল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সিটি গভার্নেন্স প্রকল্পের (সিজিপি) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিদ্ধিরগঞ্জ পুনঃখননসহ রাস্তা, ড্রেন, ওয়াকওয়ে, ল্যান্ডস্কেপিংসহ সৌন্দর্যবর্ধন শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মে দুই ধাপে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন।
নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের গলাকাটা পুল থেকে ৮নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং লেকের ওপর ছয়টি ব্রিজ নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রমতে জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় লেক খনন সাড়ে ৫ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন তৈরি হচ্ছে ৪ কিলোমিটার, আরসিসি রাস্তা থাকছে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, সিসি ব্লক দ্বারা লেকের পাড় বাঁধাই, ডিভাইডার ওয়াল সাড়ে ৫ কিলোমিটার, থাকছে এম্ফিথিয়েটার, নৌকা চালানোর ৯টি ঘাট। আরও থাকছে ভাসমান মঞ্চ তিনটি, ওয়াটার গার্ডেন তিনটি, ঝুলন্ত বাগান তিনটি, পাবলিক টয়লেট, ফোয়ারা থাকছে দুটি, ওয়েটিং সেড দুটি, প্ল্যানটার বক্স ১৫টি, ডাস্টবিন ২৮টি, স্ট্রিট লাইট সিঙ্গেল ২৮টি এবং ডাবল স্ট্রিট লাইন থাকবে ১৮২টি।
এছাড়া এই প্রকল্পে দোলনা থাকবে ছয়টি, সুইং স্নাইট দুটি, ঢেঁকিকল সাতটি, ব্রিজের মই থাকবে তিনটি, সিটিং বেঞ্চ থাকছে ১৩২টি, আরসিসি ব্রিজ থাকছে তিনটি, ফুট ওভারব্রিজ থাকছে তিনটি।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন