সোনারগাঁ সংবাদদাতা ফাহাদ
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শাখায় টাকার সংকটে গ্রাহকের চেক ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল দশটা থেকে চেক প্রতি ১০ হাজার টাকা কিছু সময়ের জন্য দিলেও পরবর্তী সময়ে থেকে ব্যর্থ হয় তাও।
এতে অনেক গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। গ্রাহকের চাপে এক সময় ব্যাংক ম্যানেজারও পালিয়ে যান।
এ সময় গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘক্ষন সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ আমরা। কেউ পূজার বন্ধের আগ থেকে এখনো পর্যন্ত চেক দিয়ে টাকা তুলতে ব্যর্থ, কেউ আবার পূজার বন্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকাও তুলতে পারেনি। কোন রকম ভাবে গ্রাহকদের সামলাতে ৫ হাজার ও দশ হাজার টাকার উপরে কাউকে দিতে পারছে না এ ব্যাংকটি। গ্রাহকদের চাপের মুখে এ শাখাটি নাজেহাল অবস্থা । উপস্থিত নেই ব্যাংক ম্যানেজারও । দায় এড়াতে অনুপস্থিত বলে মন্তব্য করেন অনেক গ্রাহক। কবে কখন কিভাবে গ্রাহকদের টাকা পাবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না শাখা কর্মকর্তাগণ । তবে ক্যাশ কাউন্টারে থাকা জুনিয়র কর্মকর্তা বলেন খুব শীঘ্রই আমাদের এ নাজেহাল অবস্থা দূর হয়ে যাবে গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা আমরা দিতে সক্ষম হব তবে সকলকে ধৈর্যের সাথে সময়টা পার করতে হবে । আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে কথা বলছি বিষয়টি সমাধানের জন্য। তাঁর পরেও গ্রাহকদের যেন চোখে অন্ধকার নেমে এসেছে। কোনোভাবেই আস্তা করতে পারছে না ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ আগস্ট এর পর থেকে এ ধস নেমে এসেছে ব্যাংকগুলোতে। যার ফলে কোনোভাবেই কোন ব্যাংকের উপর আস্থা করতে পারছে না গ্রাহকগণ।
এছাড়াও ব্যাংক কর্মকর্তারা টাকা সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সোস্যাল ব্যাংক সোনারগাঁ শাখার তথ্যমতে, ২০০২ সালে ব্যাংকটির এই শাখার যাত্রা শুরু হয়। শুরু থেকে লেনদেন ভালো হওয়ায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে এই শাখার গ্রাহক সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকটির লেনদেনে ভাটা পড়ে। চাহিদা মোতাবেক টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না গ্রাহকরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, তারল্য সংকটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
টাকা তুলতে আসা একজন গ্রাহক টাকা না পেয়ে বলেন, ‘ব্যাংকটির এই শাখায় আমার বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে। চলতি মাসের ১ তারিখে সাংসারিক খরচের জন্য ২৫ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য চেক জমা দিয়ে আজও আমি টাকা পাচ্ছি না। কবে নাগাদ টাকা উত্তোলন করতে পারব তাও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না।
একই দিন সকালে আরেক সদস্য আসেন । তিনি ২০১২ সাল থেকে ব্যাংকের এই শাখায় লেনদেন করে আসছেন। ৩ দিন আগে ২০ হাজার টাকার চেক লিখে জমা দেন তিনি। তবে বুধবার পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, তাঁর স্বামী কষ্ট করে প্রবাস থেকে এই টাকা পাঠিয়েছেন সংসার খরচের জন্য। কিন্তু এ শাখা তাঁকে কোনো টাকাই দিতে পারছে না।
রুবেল, সাহেদা ও আমেনা খাতুনের মতো শত শত গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংকে ভিড় করে যাচ্ছেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেন-দরবার করে যাচ্ছেন। তারা কোনো টাকাই দিতে পারছেন না।
গ্রাহকের অভিযোগ– অন্যান্য শাখার ন্যায় এ শাখাও খেলাপি ঋণের দায়ে জর্জরিত। এখন ব্যাংকে টাকা নেই। গ্রাহকের টাকা গেল কার পকেটে? চাপে পরে ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ ক্যাশ কাউন্টার ছেড়ে ব্যাংকের এলোমেলো হয়ে পড়েন। কিন্তু গ্রাহকের কী হবে?
বুধবার ( ১৬ অক্টোবর) গ্রাহকদের চাপ কমে গেলে ব্যাংকটির শাখা সেকেন্ড ম্যানেজার সাংবাদিকদের জানান, সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে সারা বাংলাদেশে ন্যাশনাল ব্যাংকের সব শাখায় নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। একযোগে সব গ্রাহক টাকা উত্তোলনের জন্য চেক জমা দেওয়ায় ব্যাংকের প্রধান শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। কারও টাকা না পাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। আমরা দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।