সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
ঈদুল আযহার পর সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন বানচালের অভিযোগে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে রেন্ট-এ কারের অর্ন্তভূক্ত গাড়ির মালিকদের মধ্যে। এ নিয়ে রেন্ট-এ কারের মালিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডে বিভিন্ন গ্রুপে দফায় দফায় মহড়া দিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে শান্ত পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন বানচালকে কেন্দ্র করে পরস্পর একে অপরকে দোষারোপ করছে। এ নিয়ে বিপাকে পরেছে গাড়ির মালিকরা।
অন্যদিকে রেন্ট-এ কারের আধিপত্য দখলে নিতে একাধিক মহল বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে করে অতীতের ন্যায় ফের রেন্ট-এ কার ষ্ট্যান্ডের অভ্যন্তরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হামলা ও মামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোন মুহুর্তে বড় কোন ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে মালিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
গত এক বছরে চিটাগাংরোডের রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির কমিটি তিন বার বদল হলেও কমিটিগুলোকে নিয়ে বির্তকের যেন শেষ হচ্ছে না। প্রভাবশালী একটি মহল রেন্ট-এ কার ষ্ট্যান্ডকে নিয়ন্ত্রেণে নিতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে আবারও মো. সালাউদ্দিনকে সভাপতি, জসিমকে সাধারণ সম্পাদক এবং শফি উদ্দিন মোল্লাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলে বিতর্কের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে গত ১০ জুন শনিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, কাউন্সিলর নূর উদ্দিন, কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিসহ রেন্ট-এ কারের কয়েকজন মালিক সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বসে কমিটি নিয়ে চলমান জটিলতা সমাধান করতে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পাঁচ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেন। তারা হলেন- মো. মাইনুদ্দিন, মো. অহিদ মিয়া, মো. রশিদ, মো. কবির ও সামছুল হুদা।
এ নির্বাচন ঘোষণার পর রেন্ট-এ কার মালিকরা আবারও ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। তাদের মতে শিমরাইল রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির কোন গঠণতন্ত্র নেই। নেই কোন রেজিষ্ট্রেশন কিংবা অনুমতি। এমতাবস্থায় এসব সমস্যা সমাধান না করে নির্বাচন করা যাবে না বলে জানান তারা।
এরপর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গোলাম মোস্তফা, দুই কাউন্সিলর নুর উদ্দিন ও বাদল এর উপস্থিতিতে এসব সমস্যা সমাধান করে ঈদুল আজহার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে ঈদের পর নির্বাচন করে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা থাকলেও গত বুধবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সলর শাহজালাল বাদল ও নাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সলর নুরুউদ্দিন মিয়া রেন্ট-এ কার ষ্ট্যান্ডে এসে সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও সাইফুলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে বলেন এখানে আর কোন নির্বাচন হবে না।
সালাউদ্দিন ও সাইফুলের পরিচালনায় এ রেন্ট-এ কার পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে অন্য কারো কোন হস্তক্ষেপ চলবে না বলে জানান তারা। তাদের এই ঘোষণার পরদিন বৃহস্পতিবার পাল্টে যায় রেন্ট-এ কার ষ্ট্যান্ডের দৃশ্যপট। তাদের সাথে দফায় দফায় মহড়ায় যোগ দেয় বহিরাগত লোকজন।
খবর পেয়ে গনমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই কাউন্সিলর ঘোষিত সভাপতি সালাউদ্দিনের সামনেই পূর্বের কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাসিম উদ্দিন বলেন, একজন কাউন্সিলর নিরপক্ষ ভুমিকা রেখে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দিবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিলো। কিন্তু তা না করে তারা নিজেরাই কোন প্রকার নির্বাচন ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা এই কমিটি মানি না মানবোও না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশের বাহিরে থাকায় বিষয়টি আমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়াকে অবগত করেছি। নির্বাচন না দিয়ে কেউ জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করলে যদি কোন সংঘর্ষ ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটে এর দায় দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে।
এসময় দুই কাউন্সিলরের ঘোষিত সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, ওই কমিটি আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আমি কোন কমিটিতে যাবো না। গত জুন মাসে যখন থানায় বসা হয়েছে সকলের উপস্থিতিতেই আমি বলেছি তাকে নিয়ে আমি কোন কমিটি করবো না। আমার কমিটি নিয়েই আমি থাকবো।
থানা আওয়মী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলরদের সামনে আমি বলেছি নির্বাচন দিয়ে কমিটি গঠন করার জন্য। সকলে নির্বাচনে রাজি হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া গত ১৩ জুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারন করেন। নির্বাচনের জন্য ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে নমিনেশন ক্রয় করি। জসিমও নমিনেশন নেন।
কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচনের তারিখ এক সম্পাহ পেছানোর জন্য সময় চান জসিম।
জসিমকে কিছুদিন সময় দেয়া হলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করতে পারেননি তিনি। এভাবে তো আর রেন্ট-এ কার চলতে পারে না। এক পর্যায়ে রেন্ট-এ কার মালিক সমিতির লোকজন দুই কাউন্সিলরের কাছে গেলে তারা এসে আমাকে সভাপতি ও সাইফুলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন।
এদিকে রেন্ট-এ কারের গাড়ির মালিকরা জানান, সালাউদ্দিন আমাদের ডেকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে যান। আমরা সেখান থেকে আসার পরই কাউন্সলর নুরউদ্দিন ও কাউন্সলর বাদল স্ট্যান্ডে এসে সালাউদ্দিনকে সভাপতি ও সাইফুলকে সাধারণ ঘোষণা দিয়ে যান। এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মাধ্যামে আমরা আমাদের নেতা নির্বাচিত করবো। আমাদের পরিবহন আমাদের ব্যবসা আমরাই পরিচালনা করবো। এতে কোন প্রভাবশালী কিংবা কোন বহিরাগতদেও হস্তক্ষেপ চাই না।
তারা আরও জানান, শিমরাইল মোড়ে রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন নিতে কয়েকদিন পরপরই কমিটির নামে নাটক সাজানো হয়। এতে আমরা ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। আর চাঁদার ভার পড়েছে আমাদের উপরে। চাঁদাবাজদের উন্নয়ন হলেও হয়না আমাদের উন্নয়ন। আমরা এর স্থায়ী সসাধান চাই।