সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতেন পাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা পরিবহন চাঁদাবাজ ময়নালের ছেলে যুবলীগ নেতা তমালের অনৈতিক কর্মকান্ডে এলাকায় বাড়ছে উত্তেজনা। এরআগে আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন কর্মকান্ডে আলোচিত হলেও টিসিবি কান্ডে ফেঁসে যান ওই নাম যুবলীগ নেতা তমাল। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিলেও কোন পদ পদবী ছিলোনা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মহির ভাতিজা ও সাবেক মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠজন বাবুর নাম পরিচয়ে দাবড়িয়ে বেড়াতেন তিনি। নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের নেতৃত্বে দিয়ে বেশ অর্থ বিত্তের মালিক বনে যান তমাল।
জানাগেছে, তমাল ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারেরও ঘনিষ্ঠ জন ছিলো। সেই সুবাদে তিনি টিসিবির পণ্য বিতরণের কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে অবৈধ পন্থায় রাতের আধারে পণ্যগুলো বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিতো। বিষয়টি জানাজানি হলে এনিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হলে বাবা ময়নালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। ততদিনে তমাল প্রচুর অর্থবিত্তের অধিকারী হয়ে পড়েন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে এলাকায় বিভিন্ন বিচার-আচার, দখল-বেদখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর গাঁ ঢাকা দিলেও সম্প্রতি বিএনপির আন্ত:দ্বন্দ-কোন্দল ও একাধিক গ্রুপের বিভক্তির সুযোগে বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন কৌশলে ম্যানেজ করে এলাকায় এসে ফের পূর্বের মত সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে মাঠে বিচরণ শুরু করেন।
এরপর আবারও আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ময়নালের ছেলে সেই যুবলীগ নেতা তমাল। ইতিমধ্যে সরকারি দপ্তরের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তদ্ববীর করে সদ ইচ্ছা যুব সংঘ প্রতিষ্ঠানের নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ বাগিয়ে নেন।
্্এরপর তমাল তার সেই পুরোনো অনৈতিক কর্মকান্ডের মতো সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিতে মাঠে নেমে পড়েন। ১নং ওয়ার্ডে বাসাবাড়ির বর্জ্য নিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করা, অপসারণকৃত বর্জ্য মহাসড়ক ঘেষে মহল্লার ভিতরে লেকের পাড়ে ফেলে বর্জ্যস্তুপ তৈরী করে পরিবেশ দূষণে মেতে উঠেছেন তমাল। বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণে নিয়ম নীতির বালাই মানছেন না। তার উপর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ তো রয়েছেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাসা-বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে সেই বর্জ্যগুলোকে মহল্লার পাশে মহাসড়ক ঘেষে লেকের পাশে ফেলায় তৈরী হচ্ছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এতে মহল্লার ভেতরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীদের নাক চেপে হাঁটতে হয়।
এছাড়া প্রায় সময়ই বাসা-বাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ না করায় বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের প্রতিটি রাস্তার পাশে ড্রেন, অলিগলিতে বর্জ্য ফেলছে। এতে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সড়ক হয়ে যায় পিচ্ছিল। বৃষ্টির পানিতে ময়লা-আবর্জনা মিশে একাকার হয়ে কর্দমাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া বৃষ্টি একটু বেশি হলেই ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় পচা দুর্গন্ধময় পানি রাস্তা সয়লাব হয়ে বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ভাসতে থাকে পানির ওপর নানা রকম আবর্জনা।
আওয়ামী লীগ নেতার ওই ছেলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি ইচ্ছেমতো সার্ভিস চার্জ আদায় করে। যখন-তখন সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দেয়। সার্ভিস চার্জ নিয়ে আপত্তি জানালে তারা ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ কারণে অনেকেই তাদের সেবা নেওয়া থেকে বিরত থেকে বাড়ির ময়লা যত্রতত্র ফেলে।
পাইনাদি এলাকার বাসিন্দা আবু সালেহ জানান, নিয়মিত বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ না করায় বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশ কিম্বা ড্রেনে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। নিয়মিত কেনো বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না জানতে চাইলে বর্জ্য সংগ্রাহকরা অসধাচরণ করেন। ময়লা একবারেই না নেয়ার হুমকি দেয়। এরা আওয়ামী লীগের শাসনামলে যে প্রভাব খাটিয়ে অসধাচরণ করছে এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আরও বেশী নৈরাজ্যেও সৃষ্টি করছেন। এতো সাহস পায় কি করে।
গৃহবধু তাসলিমা জানান, কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন অজুহাতে সার্ভিস চার্জের নামে টাকা আদায় করে থাকে বর্জ্য সংগ্রাহকরা। এদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। শীঘ্র্ই তমালের এসব অনৈতিক কর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নামধারী যুবলীগ নেতা তমালের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।