সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকেও পালিয়ে গেছে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতারা। সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অন্যতম অনুসারী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শীর্ষ সন্ত্রাসী দুর্নীতির বরপুত্র মতিউর রহমান মতি কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর এলাকায় এসে মহড়াও দিয়েছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় একের পর এক মতি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে আবারো গা ঢাকা দিয়েছে মতি। মতি এলাকায় না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের ক্রাইমজোন খ্যাত আদমজী বিহারী ক্যাম্পে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে কথিত নামধারী চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনসহ তার অনুসারিরা।
গত ৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় বিহারী ক্যাম্পের নারী-পুরুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বিহারী ক্যাম্পটি দীর্ঘ দিন ধরেই অপরাধীদের অভয়াশ্রম হিসেবে সকলের কাছে সুপরিচিত। এই বিহারী ক্যাম্পে বসবাসকারী অবাঙ্গালীদেরকে দিয়ে মতি নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড সহ আশ-পাশের এলাকাগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘ দিন ধরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা দুর্নীতিবাজ, শীর্ষ সন্ত্রাসী মতির শেল্টারে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে কথিত নামধারী চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনসহ তার অনুসারিরা।
নির্বাচন ছাড়াই এই চেয়ারম্যান ৭১ পরবর্তী সময় থেকে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে মানুষকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। এই বাহিনীর মাধ্যমে ২৫’শ পরিবারকে দাবিয়ে রেখেছে মতির এই বাহিনীরা। তারা হলো, স্বঘোষিত চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন, মৃত হালিমের ছেলে তাছলিম, মৃত কামালের ছেলে ভুট্টু, মেজর আলির ছেলে মাদকের ডিলার বাবলা ও মিঠুন, মৃত আসগরের ছেলে রকি, মৃত মোস্তাফার ছেলে রনি, গোপ ভান্ডারির ছেলে রমজান, মৃত সেলিমের ছেলে আকরাম, মৃত শুভরাতির ছেলে নথিয়া মুন্না, মৃত কোরবানের ছেলে আরমান, মৃত এফ রহমানের ছেলে গোফরান, ইউনুসের ছেলে কিরান, মোস্তফার ছেলে রাজু, ছেদির ছেলে শাকিল, মনসুরের ছেলে পিচ্চি। তাদের নিয়ন্ত্রনে বিহারী ক্যাম্পের ২৫’শ পরিবার ।
আর তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আদায় করছে মোটা অংকের চাঁদা। চেয়ারম্যানের পালিত এই সন্ত্রাসীরা বিহারী ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য, বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজী করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর রাজবাড়ী জেনেভা ক্যাম্প থেকে কাজের উদ্দেশ্যে আদমজী আসেন কথিত চেয়ারম্যান এই লিয়াকত। পরে কিছু অসাধু লোকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন সে। পরে ২০০০ সালে নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসক এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন। কিন্তু লিয়াকত হোসেন তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে তার আধিপত্য বিস্তারকে ধরে রাখার জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী মতির শেল্টারে এই বিলুপ্ত কমিটি বহাল রেখেছেন।
এদিকে, এই লিয়াকতের বিরুদ্ধে পাহাড় পরিমান অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এছাড়াও তিনি ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী মতি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এ যেন আরেক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। লিয়াকতসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিহারী ক্যাম্পের সাধারণ লোকজন।