নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান এমন কোনো অপকর্ম নাই যে সে করে নাই। নারায়ণগঞ্জে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে সব সেক্টর ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, অন্যের জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। আর ওসমান পরিবারের দুই সন্তান শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের রাজনৈতিকভাবে তাদের কোনো অবস্থান ছিল না। তাঁরা কোনো রাজনীতি করে নাই। তারা শুধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেছে। শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সামনে তাদের বড় বড় ছবি দিয়ে ফেস্টুন ব্যানার লাগানো থাকতো। ছবির মধ্যে এমন আকৃতি থাকতো যেন মানুষ দেখলেই তাদেরকে ভয় পায়। এগুলা করা হতো শুধু মাত্র চাঁদাবাজি অর্থ লুটপাট করার জন্য ।
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারসহ তার দোসরদের বিচার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত দু’দিনের অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা গুলো বলেন।
বৃহস্পতিবার ( ১৫ আগষ্ট) সকাল এগারোটায় সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
পরে শেখ হাসিনা ও তার দোসরাদের বিচারের দাবিতে ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চিটাগাং রোড থেকে শুরু করে মৌচাক হয়ে সানারপাড় দিয়ে সাইনবোর্ড ঘুরে আবারও চিটাগাং রোড এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তিনি বলেন, তাদের সন্তানরা কোথায় রাজনীতি করেছে। একটি জায়গাও ওসমান পরিবারের অবস্থান ছিল না। যেখানে শিল্পকারখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানেই তাদের অবস্থান ছিল। যাতে মানুষ ভয় করে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। নারায়ণগঞ্জের ভিআইপি ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা, ডিস ব্যবসা থেকে শুরু করে রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা, ট্রাক বাস থেকে সব জায়গা থেকেই তারা চাঁদাবাজি করতো। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা অবৈধভাবে উপার্জন করে সে টাকা দুবাইতে পাচার করেছে। সেখানে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য তৈরি করেছে। গডফাদার শামীম ওসমানের অনেক কাউন্সিলর সেই টাকা সেখানে প্রেরণ করেছে। বিভিন্ন দেশে তারা অর্থ পাচার করেছে এই অর্থ পাচারকারীদেরকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তারা বড় বড় কথা বলেছে আর মানুষের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার।
তিনি বলেন, এতই যদি বড় বড় কথা বলে থাকেন আমি সৎ তাহলে আইনের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেন না কেন। আমি যদি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে আমার বিচার করা হবে। আর যদি ন্যায় হয়ে থাকে তাহলে আমি খালাস পেয়ে বের হয়ে আসবো। আপনাদের মনে আছে ওয়ান ইলেভেনের সময় কিন্তু আমি আত্মসমর্পণ করেছিলাম। আর সে কিন্তু বোরখা পড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কারন সে অপরাধ করেছিল যদি আইনের কাছে যায় তাহলে তার শাস্তি হবে তার কারণে সেই তার নেতাকর্মীদের পালিয়ে রেখেও কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেক হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিল। ত্বকি হত্যা থেকে শুরু করে অনেক হত্যার বিচার হয় নাই। এই সকল হত্যা এই সন্ত্রাসীরা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সরকার রয়েছে এই সরকারকে আমরা বলতে চাই আপনারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করুন। যে সকল হত্যাকাণ্ড নারায়ণগঞ্জে হয়েছে সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আইনকে হাতে তুলে নিতে চাইনা এবং কাউকে খুনি বলতে চাই না। স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় এ সকল মামলার তদন্ত হয়েছিল তা প্রকাশ করুন। নারায়ণগঞ্জের সকল নির্যাতিত ব্যক্তিরা এই সকল হত্যাকারী খুনী ও সন্ত্রাসীদের বিচার চায়। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন এই সরকারের যে নৈবিত্তিক কার্যক্রম থাকবে তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে। আমি অনুরোধ করছি আমরা কেউ আইন হাতে তুলে নেব না। নারায়ণগঞ্জ যে সকল হত্যাগুলো খুন ও অপরাধমূলক কাজ হয়েছে এগুলোর বিচার আমরা চাই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মো. মাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ- সভাপতি মো. এসএম আসলাম, সহ- সভাপতি মো. ডিএইচ বাবুল, সহ- সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল, সহ- সভাপতি মো. রওশন আলী, সহ- সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলি, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মুসা, মহানগর যুবদল নেতা মাহবুব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি হিরা, মাইনুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।