শুক্রবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শুক্রবার | ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিয়ানমারে দেড়বছর জেল খেটে দেশে ফিরছেন আড়াইহাজারের ১১ যুবক

নিজস্ব প্রতিবেদক,মো.জিয়াউর রহমান :

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে  দেড়বছর জেল খেটে দেশে ফিরছেন আড়াইহাজারের ১১ যুবক

দেড় বছর মিয়ানমারে জেল খেটে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আড়াইহাজারের ১১ জন যুবক তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। রোববার দুপুর দেড়টায় ককা্রবাজার থানা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিকট ১১ যুবককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে শনিবার রাতে মিয়ানমার জেল খানা থেকে মুক্তি পেয়ে কক্সবাজার থানায় আনা হয়।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাব এর ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক জানান, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই বিশনন্দী ইউনিয়নের ১১ জন যুবক জাহাজ দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আটক রয়েছেন।
ফিরে আসা ১১ যুবক হলেন, উপজেলার মানিকপুর গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে নাদিম মিয়া, চৈতনকান্দা গ্রামের হেলালউদ্দিন মিয়ার ছেলে রতন মিয়া, একই গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে আছান মিয়া, উলুকান্দি গ্রামেন নুর আলামিনের ছেলে মনির হোসেন, বিশনন্দী গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সজীব ইসলাম, একই গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে কবির হোসেন, শরীফপুর গ্রামের মাজু মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া, বিশনন্দী গ্রামের ডালিম মিয়ার ছেলে সজীব মিয়া, চৈতনকান্দা গ্রামের ইছাক হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন, একই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম ও একই গ্রামের আমির আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম।
ওকাপের ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক জানান, ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল থেকে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ওকাপ কর্মীরা জেনেছেন বিশনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর ও কড়ইতলা গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৩ যুবক মালয়েশিয়ায় গেছে। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে। কিছু রাস্তায় আছে । কিছু লোক নিখোঁজ রয়েছে। ২০২০ সালে ১১ ই মে থেকে নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে মিয়ানমারে আটকা পড়া ১৩ জনের একটা তালিকা তৈরি করেন ওকাপ। ১৯ জুন মিয়ানমারে আটকা পরাদের ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে পরামর্শ চাওয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ডেক্স, নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন। ৫ জুলাই আড়াইহাজারের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ১০ জুলাই বিশনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছ‌ থেকে ১৩ জন নিখোঁজ হওয়ার একটি প্রত্যয়ণপত্র নিতে বলা হয়। পরে সব কাগজ ও ছবি সহ জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করা হয়। ১৩ জনের মধ্যে ২ জন কিশোর হওয়ায় তারা এখনো ফিরে আসেনি। তারা কিশোর সংশোধন কারাগারে রয়েছে।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর আড়াইহাজারের ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে বেপরোয়া মানব হয়ে উঠছেন পাচারকারীরা। এ চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে অন্যান্য এলাকার মত আড়াইহাজারের স্বপ্নচারী যুবকরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারত, শ্রীলংকা, লিবিয়া, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে আটকে রেখে অমানুষিক ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। এরই মধ্যে অনেককে বাড়ি ফিরতে হয়েছে নিঃস্ব হয়ে। গত বছর সেপ্টেম্বরে বিশনন্দী ইউনিয়নে জরিপ করে মায়ানমার থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসা অভিবাসী, অভিবাসী ফোরাম সদস্য ও এলাকার জনগনের সহযোগিতায় মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে মানবপাচারের শিকার হওয়া ৩৩ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। যাদের মধ্যে কয়েক জন দেশে ফিরে এসেছে, কয়েকজন মালয়েশিয়া গিয়ে পৌঁছেছে, বাকিরা মায়ানমার কারাগারে আটক রয়েছে । আটকদের ফিরে আনতে তারা কাজ করতে শুরু করেন। ১১ জন যুবক ফিরে আসায় তাদের পরিবারে স্বস্থির ফিরে এসেছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, আমরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ১১ জন যুবকের তালিকা তৈরী করে তাদের কক্সবাজার থানায় রিসিভ করার জন্য কাজ করছি। কেউ যাতে মানব পাচারের স্বীকার না হয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদুর রহমান জানান, যারা ফিরে এসেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। এই সকল ঘৃনিত কাজে যে সকল লোক জতিড় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানাই।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন