মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আজ মঙ্গলবার | ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Home » Slider »

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসামাজিক কার্যকলাপ

জিয়াউর রহমান,নিজস্ব প্রতিবেদক

শুক্রবার, ২১ মে ২০২১ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসামাজিক কার্যকলাপ

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিদ্রুত মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে। অনেকগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে বহুল প্রচলিত মাধ্যম হিসেবে পরিচিত হচ্ছে ” ফেইসবুক। ” এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অনেক অপ্রকাশিত সত্য ঘটনা জানা এবং প্রতিকার করা এমনকি আইনের আওতায় এনে বিচার করা সম্ভব হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ফেইসবুকের ইতিবাচক ব্যবহার করে সমাজে ঘটে যাওয়া অনেক অসংগতি মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে ও দেখা গেছে। পাশাপাশি এই মাধ্যমের নেতিবাচক ব্যবহার ও অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়।ফলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও এর খেসারত দিতে হয়।

যাইহোক মানুষের কাছে ফেসবুকের যে গ্রহণযোগ্যতা তার কারণ এ মাধ্যমটি মানুষকে সহজেই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। অনেকের মতে, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক মাধ্যম বেশি শক্তিশালী এবং এর গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। কথাটি সর্বাংশে সত্য বা মিথ্যা বলা যাবে না। অবশ্যই এর গুরুত্ব রয়েছে। তবে তা কখনই সংবাদমাধ্যমের বিকল্প হতে পারে না। সংবাদমাধ্যমকে একটি নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। প্রতিটি সংবাদপত্রের আলাদা সম্পাদকীয় নীতি রয়েছে।জবাবদিহির একটা ব্যাপার রয়েছে, যা মাথায় রেখেই সংবাদকর্মীদের কাজ করতে হয়। কিন্তু ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেলায় সেই দায়িত্বশীলতা বা জবাবদিহির কোনো বালাই নেই।

তবে আমাদের দেশে এ মাধ্যমটির যে যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে। এ অপব্যবহারের বিষয়টি সচেতন মানুষদের ইদানীং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। নানারকম অপপ্রচারের প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ফেসবুক। একশ্রেণির লোক অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে এ মাধ্যমে এমন কথা লিখে প্রচার করে যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কখনো কখনো তা শালীনতার সীমা অতিক্রম করে যায়। অনেক সময় দেখা যায়,বিশিষ্টজন ও তাঁর ভেরিফাইড ফেইসবুক আইডি থেকে অশালীন বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, মূলত এ মাধ্যমটির অপব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে এর জবাবদিহির অভাবের কারণে। তা ছাড়া এখানে সম্পাদনার বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে যে-যার মতো মন্তব্য-বক্তব্য লিখে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি আইন বলে একটি আইন রয়েছে। তবে তার ব্যবহার-অপব্যবহার নিয়েও কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত এ আইনটির যেটুকু ব্যবহার হয়েছে তার সিংহভাগ হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে। অথচ একশ্রেণির মানুষ ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে সময়ে সময়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে, সম্মানীয় ব্যক্তিদের সম্মানহানি করছে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধার বা পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচার করে কারও চরিত্রহননের অপপ্রয়াসেও লিপ্ত হয়। একটি বিষয় লক্ষণীয়, যারা সামাজিক মাধ্যম তথা ফেসবুকে নানা ধরনের ভিত্তিহীন কথা প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা কোনো গণমাধ্যমে তা করার সুযোগ পায় না।

কারণ গণমাধ্যমের যে প্রচার-প্রকাশ নীতিমালা রয়েছে তার কারণে ওইসব অসম্পাদিত কথা কখনই প্রচার করা সম্ভব নয়। ফেসবুকের অপপ্রচার বহু হৃদয়বিদারক ঘটনারও জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ সেসব অপপ্রচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার থেমে নেই।

বর্তমান সময়ে কেউ কেউ ফেক ফেইসবুক আইডি তৈরি করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনের নামে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, প্রতিহিংসা বশত অবাস্তব তথ্য উপস্থাপন করে মানহানীকর প্রচারণা চালিয়ে ব্যক্তি তথা পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এমনকি তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবি, ভিডিও, ভয়েস এডিটিং করে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনদের ও চরিত্র হরণের মতো ঘৃণ্যতম কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নিয়ে কেউ কেউ সুফল পেয়েছেন কিন্তু তা সংখ্যায় অপ্রতুল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জোরদার করা সময়ের দাবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকে বলেন, ফেসবুক তথা সামাজিক মাধ্যম নাকি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চরিত্রহননে এটা এখন একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে কেউ কেউ। এতে অবশ্য ফেসবুককে দোষ দেওয়া যায় না। কেননা আগ্নেয়াস্ত্র যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকে তখন তা মানুষের জীবন রক্ষার কাজে ব্যবহার হয়। আর যখন তা দুর্বৃত্তের হাতে যায় তখন তা মানুষের প্রাণসংহারে ব্যবহার হয়। সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিক প্রচারের যে অশুভ প্রবণতা দিনে দিনে বিস্তার লাভ করছে, তার লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।অন্যথায় শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়ে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। প্রচলিত আইনের ব্যবহার জোরদার করতে হবে। বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরদারি বাড়াতে হবে।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন