বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ বুধবার | ৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিতর্কিত সেই এসআই কামরুলকে ফতুল্লা থানা থেকে প্রত্যাহার

শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ৯:৪৩ অপরাহ্ণ

বিতর্কিত সেই এসআই কামরুলকে  ফতুল্লা থানা থেকে প্রত্যাহার

অবশেষে বিতর্কিত ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই রহিমকে আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ফাঁড়ি ও এসআই মামুনকে শহরের শীতলক্ষ্যা ফাঁড়িতে বদলী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে যোগাযোগ করা হলে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, প্রশাসনিক কারণে তাদের তিনজনকে ৮ অক্টোবর বদলী করা হয়েছে।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, এস আই কামরুলকে ক্লোজ করা হয়েছে। কারণ তাকে বদলী করা হলে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত রাখার কথা নয়। গত ৬ অক্টোবর রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষন সহ হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়ার সংবাদ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হলে এস আই কামরুলকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। যা পুলিশ সুপারের কার্যালয় পর্যন্ত গড়ায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কামরুল কে ক্লোজ করা হয়ছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।
অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে সে নারায়নগঞ্জ জেলায় ঘুরে ফিরে কর্মরত রয়েছে। প্রথমে সে ফতুল্লা মডেল থানায় কনেস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন।
তৎকালীন সময়ে সে সিভিল টিমে কাজ করেছিলো। সে সুবাদে ফতুল্লার মাদক সেক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনীর অপরাধীদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। তারপর সে সহকারী উপ-পরিদর্শক পদে আসীন হয়। পর্যায়ক্রমে সে জেলা ডিবিতে পরবর্তীতে আবারো ফতুল্লা থানায় যোগদান করেন।
জানা যায়, ৬ অক্টোবর রাত আটটার দিকে ফতুল্লার মাসদাইর থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় আগস্ট মাসে ফতুল্লা থানায় কামাল হোসেনের দায়ের করা মামলার (মামলা নং-২৩) এজাহারনামীয় ৪৪ নাম্বার আসামী মিজানকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) কামরুল।
তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে এলে ছাড়িয়ে নিতে শুরু হয় জোড় তদবির। এক পর্যায়ে গভীর রাতে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত মিজানকে।
তথ্য মতে, বিগত দুই দশকের ও বেশী সময় ধরে কামরুল নারায়নগঞ্জ জেলাতেই রয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানায় কনেস্টবল থেকে, এএসআই পরবর্তীতে এসআই হিসেব একাধিকবার কর্মরত ছিলেন। জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তে ও ছিলেন।

সর্বশেষ তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। মাঝে কয়েকটা বছর তিনি ফরিদপুর ও নরসিংদিতে ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে আন্দোলনকারীদের ওপর বেশ আগ্রাসী ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সে আওয়ামী সরকারের শাসনামলে সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের স্ত্রী লিপি ওসমান ও পুত্র অয়ন ওসামনের সাথে সখ্যতা রেখে তাদের নির্দেশনানুযায়ী তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন সহ মামলা দিয়ে হয়রানী করে বেড়িয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যোগদান করেই মিজমিজি এলাকার আলোচিত কিশোরগ্যাং ‘ডেভিল এক্স’ গ্রুপের সদস্যের কাছ তেকে ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে ব্যাপক সমালোনার জন্ম দিয়েছেন এসআই কামরুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এস আই কামরুলের শেল্টারে ওই এলাকায় কিশোরগ্যাং গ্রুপ বেপোয়ারা হয়ে উঠে। সামারীবাজ দারোগা হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল এলাকায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাইয়ের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে নাশকতার অভিযোগে কয়েকটি মামলা দায়ের করে। ওই সকল মামলায় তখনকার ওসি আবু বকর সিদ্দিক ও এসআই কামরুল ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে।
গত বছরের ২৪ অক্টোবর ভোররাত ৪টার দিকে ফতুল্লা থানার তল্লা কায়েমপুরস্থ বটতলা এলাকায় সামারী করার সময় ৩ সোর্সসহ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন গুণধর এসআই কামরুল। তিন সোর্সের নাম-রিয়াদ, বিজয় ও ইমন।
এসআই কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কর্মরত হলেও ফতুল্লা সীমানায় গিয়ে চাঁদমারি, শিবু মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আটক বাণিজ্য করতেন। কারণ ফতুল্লা থানায় কর্মরত থাকাকালে অপরাধীদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে।
৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কৌশল পাল্টিয়ে বিএনপির লোক সাজার চেষ্টা করে এসআই কামরুল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন