অহেতুক নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে তৈমূর আলমকে সরিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। মাঝে তিনটি বছর জেলা বিএনপির রাজনীতিকে ধস নামানো হয়েছে। এবার তৈমূর আলমকে জেলা বিএনপির দায়িত্ব দিয়ে অনেকটা ভুল স্বীকার করলো কেন্দ্রীয় বিএনপি। তিন বছরেরর জেলা বিএনপির নড়াদশা অবস্থা থেকে টেনে তুলতে আবারো তৈমূর আলমের ঘারে দায় চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপি বুঝতে পেরেছে এ জেলায় রাজপথে বুক উচিয়ে পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়ানোর মত একজন নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। এমনটাই দাবি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তারা আরও বলছেন, কিন্তু গত তিনটি বছরে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে নিতে আবারো নতুন করে ঘর সাজাতে হবে তৈমূর আলমকে। একই সঙ্গে গত কমিটিতে বঞ্চিত হওয়া যারা তৈমূর আলমের সঙ্গে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছিলেন সেইসব নেতাদের অবজ্ঞা করায় তারা এখনও রাজনীতিতে রাজপথে ফিরে আসেনি। ফলে আবারো সেইসব রাজপথের নেতাকর্মীদের মাঠে ফিরাতে হলে তৈমূর আলমকে নতুন করে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
নেতাকর্মীরা বলেছেন, ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে সরিয়ে ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপিই প্রমাণ করেছে তৈমূর আলমকে জেলা বিএনপি থেকে সরানো ছিল ভুল। যার ফলশ্রুতিতে আবারো সেই দায়িত্ব তৈমূর আলম খন্দকারের উপর বর্তায়। রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে তৈমূর আলমকে নিয়ে নানা পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও তৈমূর আলম খন্দকার একজন রাজপথের নেতা সেটা অতীতে একাধিকবার প্রমাণ করেছেন।
গত তিনটি বছর জেলা বিএনপির গুটি কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে জেলা বিএনপির কর্মসূচি পালনের সীমানা ছিল চাষাড়া বালুর মাঠের চিপা গলি। তৈমূর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই চাষাঢ়া বালুরমাঠের গলি ছেড়ে রাজপথে নামিয়েছে জেলা বিএনপিকে। শুধু রাজপথই নয় জেলা বিএনপির দুটি কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতই।
প্র্রায় তিন বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ব্যানারে চাষাড়া বালুর মাঠের গলির ভেতরে কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে বালুর মাঠের গলি ছেড়ে এবার রাজপথে নেমেছে বিএনপি। তবে সেই গলির গন্ডি ছেড়ে বাহির হতে পারেনি মহানগর বিএনপি। দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে পূর্বের জৌলুশ ফিরে এসেছে। পূর্বে চাষাড়া বালুর মাঠেও গুটিকয়েকজন নেতাকর্মীদের নিয়েই জেলা বিএনপির কর্মসূচি পালিত হতো।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তৈমূর আলম খন্দকার ৯৮ সালে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছিলেন। ওইদিন ইব্রাহীম নামে যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়েছিলেন। ২০১১ সালের ৬ জুন শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় তৎকালীন সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে তৈমূর আলমের উপর লাঠিচার্জ করা হয়। ওই সময় সেকেন্ড অফিসার আতিয়ার রহমান তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে স্বজোরে তৈমূর আলমের আঘাত করেছিলেন।
২০১৪ সালে শহরের নিতাইগঞ্জে হরতালে পুলিশি লাঠিচার্জের শিকার হোন তৈমূর। এ ছাড়াও কয়েক বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার সামনে তৈমূর আলমকে টেনে হেছড়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। তৎকালীন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন তৈমূর আলমের গলা চেপে ধরেছিলেন। এসব ছাড়াও একাধিকবার রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হয়েছিলেন তৈমূর আলম। কিন্তু বরাবরই তিনি রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন।
জানাগেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করা হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভা শেষে ১১ জানুয়ারি ও ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয় যেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা গেল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, নাসির উদ্দিন, আব্দুল হাই রাজু, লুৎফর রহমান আব্দু, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন, জাহিদ হাসান রোজেল, নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা, সদস্য পদে রয়েছেন খন্দকার আবু জাফর, নজরুল ইসলাম টিটু, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, শরীফ আহমেদ, মাহমুদুর রহমান সুমন, মোশারফ হোসেন, বশির উদ্দিন বাচ্চু, সেলিম হক রুমী, মোশারফ হোসেন, আশরাফুল আলম রিপন, জুয়েল আহমেদ, ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবু, দুলাল হোসেন, কাশেম ফকির, ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, আব্দুল আজিজ মাষ্টার, এম এ হালিম জুয়েল, গুলজার হোসেন, শাহ আলম হিরা, নুরুন্নাহার বেগম, একরামুল কবির মামুন, শাহ আলম মুকুল, মোস্তাকুর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম, রহিমা শরীফ মায়া, কামরুজ্জামান মাসুম, হামিদুর হক খান, বাকির হোসেন, আল মোজাহিদ মল্লিক সহ ৪১ সদস্যের কমিটি।
জেলা বিএনপির পরিচিতি সভা সহ টানা দুটি কর্মসূচিতে কমিটির অধিকাংশ নেতাদের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও সদস্য মাহমুদুর রহমান সুমনকে দেখা যায়নি। তবে জেলা বিএনপির প্রথম মানববন্ধনে জেলা বিএনপির অনেককে দেখা না গেলেও দ্বিতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সংখ্যা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে জেলা বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন থানা/উপজেলার কমিটিগুলোতে যারা পদে আসতে আগ্রহী তারাও এসব কর্মসূচিতে যোগদান করেছেন।