শনিবার, ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজধানী যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ কর্মকর্তার বাবা মাকে কুপিয়ে হত্যা।

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪ | ১০:০৬ অপরাহ্ণ

রাজধানী যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ কর্মকর্তার বাবা মাকে কুপিয়ে হত্যা।

শরীফ আহমেদ প্রতিবেদনঃ

রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল আরাবাড়ি সালাহউদ্দিন স্কুলের পাশে শফিকুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে (৫০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিচতলা ও দোতলায় লাশ পাওয়া গেলেও চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বেলা ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তিনি বলেন, আমরা সকাল ৭টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। এসে শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তাদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করছি গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা তাদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়।

ওসি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে কী কারণে স্বামী-স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে পারিনি। ঘটনাস্থলে সিআইডির ফরেনসিক টিম এসেছে তারা আলামত সংগ্রহ করেছে। আলামত সংগ্রহ শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

পরিবারের অভিযোগ, ফেনীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
জানা গেছে তিনি শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংক মতিঝিল শাখার একজন অবসরপ্রাপ্ত ড্রাইভার ছিলেন এবং তার এক ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (ইমন) বাংলাদেশ পুলিশের এসআই পদে (এসবি) তে কর্মরত আছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, ১৭৫ পশ্চিম মোমিনবাগ বটতলা এলাকায় নিজের চার তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন ওই দম্পতি। তাদের এক ছেলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এসবিতে কর্মরত।

অপর এক মেয়ে বিবাহিত, তিনিও ঘটনার সময় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডটি আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে ঘটেছে।
পূর্ব পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড। এছাড়া হত্যাকারীরা তিনজনের অধিক থাকতে পারে। তারা আগে থেকেই বাসার বাউন্ডারির ভেতরে ওত পেতে ছিল। হত্যাকারীরা দুইভাবে বাসায় প্রবেশ করতে পারে। এক প্রধান গেট টপকিয়ে পাশাপাশি ওই বাসার সঙ্গেই একটি নির্মাণাধীন ভবন আছে, সেটার একতলা ছাদ দিয়েও তারা বাসায় প্রবেশ করতে পারে।
প্রতিদিন শফিকুর রহমান ভোরের দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। নিয়মিতভাবে বাসার পানি ছাড়েন তারপরে পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। আজও একই সময় উঠেছিলেন তিনি। পরে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামেন পানি ছাড়ার জন্য। হয়তো বা নিচে নেমে পানি ছাড়ার পর বাসার বাউন্ডারির ভেতরে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে টেনে হেঁচড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে দুর্বৃত্তরা চলে যায় দ্বিতীয় তলায়। তখন মশারির ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তার স্ত্রী ফরিদা। মশারির ভেতরেই ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার হত্যা নিশ্চিত করে। স্ত্রী ফরিদার রুমের দরজাটা খুলেই নিচে নেমেছিলেন তার স্বামী।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আগে থেকেই হত্যাকারীরা ওই বাসায় ওত পেতে ছিল। কারণ শফিকুর যে প্রতিদিন ভোরে উঠে পানি ছাড়ে তারপরে মসজিদ যান তারা সেটা জানতো। দুর্বৃত্তরা ফরিদাকে হত্যার পর রুমের ভেতরে আলমারির লকার খুলে কিন্তু কোনো টাকা পয়সা নেয়নি। বিভিন্ন কাগজপত্র এলোমেলো করেছে তারা। এমনকি নিহত ফরিদার গলার স্বর্ণের চেইন ছিল সেটাও খোয়া যায়নি। এসব দেখে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে হয়তো দুর্বৃত্তরা কোনো কাগজপত্র বা এমনও হতে পারে দলিল খুঁজতে এসেছিল। ওই দম্পতির গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়। সেখানে সম্পদ নিয়ে তাদের কোনো বিরোধ ছিল কিনা সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঘটনার সময় দম্পতির ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঢাকায় আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাসার আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে, সেটা এখনো অব্যাহত আছে। বাসার দুই পাশেই দুটি সড়কে সব সময় যানবাহন ও লোকজন চলাফেরা করে। সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন