সোমবার, ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ সোমবার | ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুর্নীতি মামলার আসামি মতির ছত্রচ্ছায়ায়, সিদ্ধিরগঞ্জের কিশোর গ্যাং লিডার নাতিন জামাই পানি আক্তার বেপরোয়া

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ | ৬:০০ অপরাহ্ণ

দুর্নীতি মামলার আসামি মতির ছত্রচ্ছায়ায়, সিদ্ধিরগঞ্জের কিশোর গ্যাং লিডার নাতিন জামাই পানি আক্তার বেপরোয়া

স্টাফ রিপোর্টর : অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগের দুর্নীতি মামলার আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক ও নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির নাতিন জামাই দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোরগ্যাংয়ের লিডার পানি আকতার। এলাকায় এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি ছাড়াও এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মাদক ব্যবসা, আদমজী ইপিজেডে ঝুট ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্তা, অবৈধ অস্ত্রের মহড়া, ৬নং ওয়ার্ডে ডিশ ব্যবসা ওয়াইফাই নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত তিনি। নানা ঘটনায় ও অপরাধে এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১৪ এর অধিক মামলা রয়েছে।

একাধিকবার গ্রেফতার হলেও কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেন পানি আকতার। বর্তমানে আদমজী ইপিজেডের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই রয়েছে আকতার ওরফে এই পানি আকতারের নিয়ন্ত্রণে।

কাস্টমসে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মালামাল বের করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে পানি আকতারের বিরুদ্ধে।

আকতার হোসেন ওরফে পানি আক্তার সুমিলপাড়া এলাকার মৃত করিম কসাই এর ছেলে।এক সময় তিনি দোকানে দোকানে পানি বিক্রি করতেন। সেই থেকেই পানি আকতার নামে পরিচিতি লাভ করেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসী পানি আকতারের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৪ আগষ্ট, ২৪ আগষ্ট, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি, একই সালের ১২ জুলাই, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ২৬ এপ্রিল হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। একই বছরের ৩ আগষ্ট মারামারি এবং ডিসেম্বরের ‘১৩ তারিখ ইপিজেড থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি ও হামলা মারধরের অভিযোগসহ ১৪ অধিক বেশি মামলা রয়েছে।

আদমজী ইপিজেড সূত্রে জানা যায়, আদমজী ইপিজেডে দীর্ঘদিন ধরে ইপিকের জিএম নূরুন নবী সিদ্দিকী সহ অসাধু কয়েক কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে মূল্যবান মালামাল পাচারের সঙ্গে জড়িত পানি আকতার গ্রুপ। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে পানি আকতার দিনের পর দিন এই অপকর্ম করেই যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে ইপিজেড থেকে কোটি কোটি টাকার মালামাল ইপিক গার্মেন্টস থেকে অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত বের করছেন। শুল্ক ফাঁকি দিয়েই ঝুটের আড়ালে এইসব মালামাল বের করে নিয়ে আসা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, পানি আকতার দরিদ্র পরিবারের সন্তান। একসময় নুন আনতে পানতা ফুরাতো। ভ্যান গাড়ি ঠেলে ঝাড়ে করে দোকান দোকান পানি সাপ্লাই দেয়ার কাজ করতো।

একসময় কাউন্সিলর মতির অফিস সহকারী পিচ্চি বাবুর হাত ধরে যোগ দেয় কাউন্সিলর মতির সাথে। এরপরই মতির নাতনিকে বিয়ে করে হয়ে যান মতির নাতিন জামাই। ইপিজেড ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গড়ে তুলেন বিশাল এক ক্যাডার বাহিনী। আর এ ক্যাডার বাহিনীকে আড়াল করতে যোগ দেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদে।

এলাকাবাসী আরও জানায়, আকতার এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি জোরদার হলে এই বাহিনী থেকে তাঁদের মুক্তি মিলবে। এই সন্ত্রাসীর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতার করার জন্য জেলা পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১১ এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে ও হুন্ডা বেষ্টিত বিশাল ক্যাডার বাহিনী থাকায় আদমজী ইপিজেডে কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে দিনদিন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পানি আকতার গ্রুপ। অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা থেকে পিছু হটেছেন এ বাহিনীর ভয়ে। ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে আদমজী ইপিজেডের নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরি চেকপয়েন্ট-২ থেকে বিল্ডিং নির্মাণ সামগ্রী বোঝাই একটি ট্রাক’ ইপিজেড গেটের সামনে প্রধান সড়কের উপর আসা মাত্রই পানি আকতারের নেতৃত্বে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামালসহ ট্রাকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় তার বাহিনী। এ ঘটনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল পানি আকতারকে প্রধান আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

এছাড়াও আদমজী ইপিজেডের এসএমএল গার্মেন্টস হতে ঝুটের আড়ালে কোটি টাকা মূল্যের কেমিক্যাল সহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করে। এঘটনায় আকতার ও তার বাহিনীকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ডিএমবির মালামাল লুট করতে গিয়ে ৫০ লাখ টাকার জরিমানাও গুণতে হয়। এছাড়া ইয়েস্টার গার্মেন্টস হতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে রিজেক্ট প্যান্ট অবৈধ পন্থায় বের করার সময় আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরে পানি আকতারকে ইপিজেডে কালো তালিকাভুক্ত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাসী আকতার ওরফে পানি আকতারের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, হামলা ও নাশকতা, দাঙ্গা হাঙ্গামা বিস্ফোরক, মাদকের নিয়ন্ত্রণ, ইভিটিজিং, জমি দখল, সরকারি গ্যাস ও বিদ্যুৎ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। মূলত শেখ রাসেল পরিষদের নেতা পরিচয়ে সে এলাকায় তৈরি করেছে বিশাল কিশোরগ্যাং গ্রুপ। যারা সমাজে চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। বর্তমানে নাসিকের ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এ বাহিনীর কিশোরগ্যাং সদস্যরা।

এছাড়া এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১০ জুন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলা চালায় আক্তার ওরফে পানি আক্তার বাহিনীর সদস্যরা।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে কিশোর গ্যাং লিডার পানি আক্তার কে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন