স্টাফ রিপোটারঃ রক্তদান একটি মহৎ কাজ। সেই মহৎ কাজটি করার জন্যই নারায়নগঞ্জ জজ কোর্টের তরুন আইনজীবীগন লয়ার্স ব্লাড ডোনার ক্লাব নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ নারায়নগঞ্জ জজ কোর্টের সর্বত্র লয়ার্স ব্লাড ডোনার ক্লাবের জয়গান চলছে।
এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের ৩ জন আইনজীবী স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন। এই ৩ জন রক্তদাতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁর বন্ধু–বান্ধব, আইনজীবীসহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীরা। পাশাপাশি অভিনন্দন জানিয়েছেন নারায়নগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মুহাম্মদ মুহসীন মিয়া।
সভাপতি মুহসিন মিয়া বলেন, প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাই এই সংগঠনের রক্ত দানকারী আইনজীবীগনকে। আরো ধন্যবাদ জানাই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পিছনে যারা কাজ করেছেন। যাদের প্রচেষ্টা যাদের পরামর্শ এবং যাদের উদ্যোগে এমন একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ। রক্তদান প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এটা খুবই জরুরি একটা বিষয়, অনেক সময় অনেকের জরুরী রক্তের প্রয়োজন হয় তখন এই সংগঠনের মাধ্যমে আইনজীবীসহ আইনজীবীর পরিবার ও অন্যান্য সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। রক্তদান প্রসঙ্গে তার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে তিনি বলেন, আমি নিজেও বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় দেখেও রক্ত দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, এই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক আইনজীবী, তার পরিবার এবং সাধারন মানুষ উপকৃত হবে। আমি এই সংগঠনের সাথে জড়িত সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি এবং সেই সাথে এই সংগঠনের সাফল্য কামনা করি।
লয়ার্স ব্লাড ডোনার ক্লাবের কোষাধক্ষ পদে থাকা এডভোকেট ধনঞ্জয় গুহ জয় বলেন, এ পর্যন্ত ৩২ বার রক্ত দিয়েছি, ‘আমার থেকেও বেশি বার রক্ত দিয়েছেন এমন অনেকে আছেন। তবে অন্যদের উৎসাহ দিতেই ৩২ বার রক্তদানের কথা মনে রেখেছি। এ ছাড়া কে কতবার রক্ত দিলেন, কত দিন আগে দিলেন তা নিজের এবং রোগীর ভালোর জন্যই মনে রাখা প্রয়োজন।’
লয়ার্স ব্লাড ডোনার ক্লাবের ১ম রক্তদাতা এড. গাজী মোকাদ্দেছ হোসেন বলেন,‘রক্ত দেওয়ার পর যারা বেঁচে যায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। ভবিষ্যতে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রক্তের প্রয়োজন হলে যেন তাদের রক্তের জন্য সমস্যায় পরতে না হয়। নারায়নগঞ্জ জজ কোর্টের কোন আইনজীবীর পরিবার যেন রক্তের সমস্যায় না পড়েন আমরা আমাদের সাধ্যমত সে চেষ্টাই করবো। আমি রক্ত দিতে পেরে মন থেকে শান্তি অনুভব করি। আমি আল্লাহর দোয়ায় আমাদের সকল আইনজীবীদের রক্তের প্রয়োজনে পাশে থেকে ব্যবস্থা করবো আমাদের লয়ার্স ব্লাড ডোনার ক্লাবের মাধ্যমে। আমাদের সংগঠনের প্রত্যেকটি মানুষই খুবই আন্তরিক, মানুষের প্রয়োজনে নিবেদিত প্রান।
২য় রক্তদাতা এডঃ মশিউর বলেন, একসময় বেশির ভাগ মানুষের ধারণা ছিল রক্ত কিনতে হয়। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকেরা রক্ত সংগ্রহে এগিয়ে এসেছেন। তাই এখন রক্ত না পাওয়ার প্রবনতা অনেকটাই কমে গেছে। রক্ত দিলে আমি যে আত্নতৃপ্তি পাই অন্য কোন কাজে এমন তৃপ্তি পাই না। তাই আমি এই মহৎ কাজে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
৩য় রক্তদাতা এডঃ বিশ্বজিত রায় বলেন, আমি এখনো পর্যন্ত অনেক বার রক্ত দিয়েছে। যখনই রক্ত দিতে যাই তখনই রক্ত গ্রহিতাগন আমাকে খাওয়ানো সহ যাতায়াত ভাড়া পর্যন্ত দিতে চায়। কিন্তু আমি কোনো দিন কারো কাছ থেকে কিছু খাইনি বা নেইনি। আমি যাদের রক্ত দিয়েছি তাদের সর্বদা নিজের আপনজন ভেবেই দিয়েছি। রক্ত দিয়ে যখন জানতে পারি আমার রক্তে একটি জীবন সুস্থতা ফিরে পেয়েছে তখন আমার যেন পৃথিবীর সর্ব সুখ পাওয়া হয়ে যায়। তাই আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন এভাবেই মানুষের সেবা করে যেতে পারি।
এক ঝাক তরুন আইনজীবীদের নিয়ে গড়া এই মানব সেবামূলক সংগঠনে রক্তদানের সব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এড. হাসিবুল হাসান রনি এবং সদস্য সচীব শেখ জসীম। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটি রক্তদাতার সাথে রক্তদানের সময় তাদের সঙ্গী হয়ে একনিষ্টভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এডভোকেট জনি চন্দ্র গোপ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংগঠনটি আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম চালু করে। স্বেচ্ছায় রক্তদানে প্রস্তুত আইনজীবীদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সেতুবন্ধনে কাজ করছেন এড. ফয়সাল আহমেদ, এড. সোনিয়া খাতুন, এড. আশীষ চক্রবর্তী, এড. আফজল, এড. ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, এড. রাকিব আমান, এড. রাজু, এড. রীফা, এড. রীমা, এড. ফিরোজ, এড. লিটন, এড. চায়না, এড. রনি, এড. দীপু, এড. হাসান, এড. নয়ন সহ নারায়নগঞ্জ জজ কোর্টের এক ঝাক তরুন আইনজীবীগন।