নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সিদ্ধিরগঞ্জে গানবাজনা ‘সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’ করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। আগামী শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গত সোমবার কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের অফিসে আয়োজিত সভায় এ–সংক্রান্ত তাঁর একটি বক্তৃতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের উপস্থিতিতে তাঁর নির্দেশে এক ব্যক্তি উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘এই এলাকায় গানবাজনা নিষিদ্ধ। এই মুসলমান সমাজে যাতে আর কোনো গানবাজনা না হয়, এ জন্য কাউন্সিলর অফিস থেকে প্রত্যেক মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েত কমিটি বরাবর চিঠি ইস্যু করা হবে। আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজের বয়ানে বলে দেওয়া হবে। আগামী শনিবার থেকে গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেই চিঠির রেফারেন্স নিয়ে প্রতিটি বাড়িওয়ালাকে আপনারা বলে দেবেন।’
আগামী শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি বাড়িওয়ালাকে বলে দিতে বলা হয় সভায়।
বিষয়টি স্বীকার করে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজে পার্টির নামে রাতে এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল যুবকেরা বিভিন্ন দিবসে গানবাজনা করার কারণে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। রাতে এই ডিজে পার্টির কারণে বাগ্বিতণ্ডা থেকে কয়েক দিন আগে নূরবাগ এলাকার মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ কারণে আমরা সবাই মিলে গানবাজনা বন্ধ রাখার বিষয়ে সভা থেকে একমত হয়েছি। ওই সভায় পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটি সমর্থন জানিয়েছে।’
এ বিষয়ে আরও দুটি সভা হবে। পরবর্তী থানার ওসির সঙ্গে আলাপ করা হবে। সামাজিক ও ভালো কাজের জন্য যেখানে এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সমর্থন আছে, সেখানে অবশ্যই প্রশাসনও সহযোগিতা করবে।
শাহজালাল বাদল জানান, এ বিষয়ে তাঁরা আরও দুটি সভা করবেন। পরবর্তী থানার ওসির সঙ্গে আলাপ করা হবে। সামাজিক ও ভালো কাজের জন্য যেখানে এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সমর্থন আছে, সেখানে অবশ্যই প্রশাসনও সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।
বিষয়টি শুনেছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তো গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়নি। উনি (শাহজালাল বাদল) গানবাজনা নিষিদ্ধ করার কে? এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মশিউর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি
এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো সংস্কৃতিই হোক, সেটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। মানুষের আচার–আচরণের ওপর সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল, তা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। যখনই চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ব্যাপার থাকে বা চেষ্টা করা হয়, তখনই বুঝতে হবে কারও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ব্যাপার রয়েছে। চাপিয়ে দেওয়া ব্যাপার শেষ পর্যন্ত টেকে না। গানবাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের ব্যাপারে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তবে রাতের বেলায় উচ্চশব্দে যেসব ডিজে পার্টি করা হয়, সেটি দ্বারা শব্দদূষণ ও মানুষের ক্ষতি হয়। সেটি করাও ঠিক নয়।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তো গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়নি। উনি (শাহজালাল বাদল) গানবাজনা নিষিদ্ধ করার কে? এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।