আওয়ামীলীগের এক নেতাকে বিএনপির জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ দিয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রহমান। আওয়ামীলীগের ওই নেতাকে বিএনপিতে পদ দেয়ায় তার বাড়িতেই বিশাল পরিসনে স্বেচ্ছাসেবকদলের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। মুলত আওয়ামীলীগ নেতা মনির হোসেন মেম্বারকে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই সায়েম ও মাহাবুব ওঠেছেন আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে। এ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদলের ত্যাগী রাজপথের নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামীলীগ নেতা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপিতে ঘা ভাসিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর এলাকার মনির হোসেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ছিলেন এমন প্রমাণ দেখাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের প্রচারপত্র ব্যানার মিডিয়াতে সরবরাহ করেছেন। যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ছবি সহ পোষ্টারে নিজের নাম ছবি দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করা সেই আওয়ামীলীগ নেতা মনির হোসেনের প্রমাণ পাওয়া গেল। সেই তাকেই বিএনপির জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের পদ অধিষ্ট করে তার বাড়িতেই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
এই ঘ্টনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের উপর ক্ষোভে ফুঁসছে নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- পদ বানিজ্য করতে করতে আওয়ামীলীগ নেতাদেরকেও তারা বিএনপির পদ দেওয়া শুরু করেছেন এবং এর ফলে রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দিনকে দিন দলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। সেই সাথে মনির হোসেনের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সভাপতি সেক্রেটারীর বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, কাঁচপুরের মনির হোসেন মেম্বার এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। গত উপজেলা নির্বাচনে সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামীগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের পক্ষে ভোট চেয়ে পোষ্টার ছাপিয়েছিলেন মনির হোসেন মেম্বার। সে পোষ্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ছিলো, ছিলো জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানও। সেইসাথে ছিলো আওয়ামীলীগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরের ছবি ও তার পক্ষে ভোট প্রার্থনা। সৌজন্যে ছিলো মনির হোসেন মেম্বারের নাম ও ছবি। কাঁচপুর এলাকায় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে তিনি দীর্ঘদিন যাবত জড়িত বলেও জানা যায়।
আত্মস্বীকৃত এই আওয়ামীলীগ নেতাকে বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদ দিয়ে বিএনপি নেতা বানানোর অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ পদ বানিজ্য সংগঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। ইতিপূর্বেও এ দুজনের বিরুদ্ধে একই ধরনের একাধীক অভিযোগের খবর গণ মাধ্যমে এসেছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে সায়েম মাহবুবের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা বানিজ্যের অভিযোগের পাশাপাশি বর্তমানে থানা কমিটি গঠনেও একই ধরনের বানিজ্যের অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতাকর্মীরা। সারা বছর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে পদের নিশ্চয়তা মিলে না অথচ টাকা হলে ঘরে বসেও নাকি পদ পাওয়া যায়।
এবার সায়েম মাহাবুবের বিরুদ্ধে আনা সে অভিযোগের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন তারা নিজেরাই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে সেই আওয়ামীলীগ নেতা থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হয়ে যাওয়া মনির হোসেন মেম্বারের বাড়িতে।
অনুষ্ঠানে সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ও সাংগঠনিব সম্পাদক সালাউদ্দিন সালুসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন সে অনুষ্ঠানে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিনের অনুষ্ঠান আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে আয়োজন করায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতিকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দ এবং এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা। তানাহলে সভাপতি সেক্রেটারীর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারিও জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, মনির হোসেনকে আমি বিএনপির লোক হিসেবেই জানি। তার আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। তবে যদি কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।