নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা শুরু হয়েছে। আগামী ৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপনের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে যায়। শূন্য ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফতুল্লা ইউনিয়নবাসী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যাকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হবে এমন একজন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন।
ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে এর আগে দীর্ঘ ৩ দশক ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন নূর হোসেন। তার মৃত্যুর পর ২০১১ সালের ১৬ মে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন। আর লুৎফর রহমান স্বপন মৃত্যু বরণ করার পর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে যায়। আর শূন্য চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।
জানা গেছে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ লিটন, ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছির আলী, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা ছাত্র লীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক, যুবলীগ নেতা আজমত আলী। তারা সবাই প্রভাবশালী এবং এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে সুপরিচিত। তবে তাদের মধ্যে তিনজন বেশী আলোচনায় রয়েছেন। তারা হলেন, মীর সোহেল আলী, ফাইজুল ইসলাম ও শরীফুল হক।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী দলের সাংগঠনিক কাজের বাইরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের সেবায় পাশে দাড়িয়েছেন। করোনার ভয়াবহ সময়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দিয়েছেন দলীয় লোকজন সাথে নিয়ে। শীতার্ত অসহায় মানুষের মাঝে শামীম ওসমানের নির্দেশে নিজস্ব অর্থায়নে কম্বল বিতরণ করেছেন। পাকিস্তান খাদ নামে একটি পুকুরে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দুষণ করছিল লোকজন। তখন এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে তাদের সাথে করে শামীম ওসমানের কাছে গিয়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করেছেন তিনি। ফলে ফতুল্লা ইউনিয়নবাসীর কাছে পরিচিত মুখ শীর সাহেল আলী।
ফতুল্লা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী জানান, এলাকাবাসী যখন যে কাজে ডাক দিয়েছে করে দিয়েছি। এছাড়াও শামীম ভাইয়ের নির্দেশে ছোট খাটো অনেক কাজ করেছি এলাকাবাসীর কল্যানে।
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ৭ জুলাই ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লালপুর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বুস্টার নামে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পানি নিস্কাশন পাম্প স্থাপন করা হয়। ওই পাম্প ৪নং ওয়ার্ড অর্থাৎ ডিএনডির অভ্যন্তর থেকে পানি নিস্কাশন করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলেছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পাম্পের তত্বাবধানে ছিলাম আমি। ওই সময় ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চার দিকের এলাকা উচু হওয়ায় পানি নিস্কাশন হতে পারেনা। পয়ঃনিস্কাশনের পানিতে মানুষ কোন মতে চলা ফেরা করতে পারলেও বৃস্টির পানি জট বেধে প্রায় কোমর সমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এমপি শামীম ওসমান বিষয়টি জানতে পেরে এলাকাবাসীকে ডেকে দ্রুত এর সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আস্থাভাজন এই নেতা দলীয় কর্মসুচিগুলোতে বিশাল শোডাউন করে দলীয় নেতাকর্মীর কাছে দক্ষ সংগঠক হিসেবেও জনপ্রিয়।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন মীর সোহেল। বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। তাদের সমস্যার কথা শুনছেন। মোটকথা উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ওদিকে পিছিয়ে নেই অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। তারাও মাঠে নেমেছেন। তবে দিন শেষে শামীম ওসমানের গ্রীণ সিগন্যাল যে পাবে সে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হবে। এমনটা বলছেন দলীয় নেতাকর্মী এবং এলাকার বিশিষ্টজনেরা। এই জন্য শামীম ওসমানের সমর্থন পেতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।