নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব কামাল হোসেন অর্থা ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা, সরকারী চাকুরী, একেবারে তৃনমুল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, বর্তমান সময়ে বেতন-ভাতা সর্বসাকুল্যে ৩০/৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার জীবনযাত্রার ব্যয়ভার ও অর্জিত সম্পদের চেহারা দেখলে সহজেই বুঝা যায়, তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার অফিসে কেউ পর্চা নিতে আসলে তাকে ঘুষ দিতে হয় পর্চা প্রতি ৩শ থেকে ৫শ টাকা। জমাখারিজ বা নামজারির রেটিংটা আবার ভিন্ন ধাচের। কাগজপত্র সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১১শ ৪৫ টাকার পরিবর্তে আবেদনকারীকে দালালের হাতধরে ঘুষ দিতে হয় কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা। জমির রেকর্ডে ত্রুটি বা অর্পিত সম্পত্তি বা সরকারী খাস জমি হলে জমির বর্তমান বাজার দরে শতাংশ প্রতি লাখ লাখ টাকা দিলেই নামজারী পেয়ে যায় ভুমিদস্যুরা। আর এভাবে সরকারের খাল বিল নদী-নালা ডোবা বা পতিত জমি চলে যায় ভুমিদস্যুদের দখলে। অনুসন্ধানে পাওয়া নায়েব কামালের চাকুরী জীবনে এমন সব ঘটনার বিস্তারিত নিয়েই এবারের প্রতিবেদন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কামাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন একরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। গরীব পরিবারের সন্তান। একটা সময়ে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো, সরকারী চাকুরী নামক আলাদিনের চেরাগটি হাতের পাওয়া পরে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। ঘষতে ঘষতেই গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পদের স্বর্গরাজ্য।
ঢাকায় রয়েছে ফ্লাট নারায়ণগঞ্জের বন্দর আমিন দশ কাটার উপরে পাইলিং করে রেখেছেন কামাল। অবৈধ টাকায় তার স্ত্রীর নামে এইসব সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন তিন, এছারাও একরামপুরে রয়েছে তার ব্যাপক আধিপত্য, প্রতিবেশীরা তার ভয়ে আতঙ্কিত। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখানোর কেউ নেই। তার বিরুদ্ধে যাওয়া মানে জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমন কেউ নাই যার দরজা সে চিনে না।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, টাকা ছাড়া কামালের অফিসে কোনো ফাইলেই সই হয় না। অনেকেই বলছেন, টাকা দিলেও কামাল হোসেনের চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকদের ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। জমির নামপত্তন, হাল নাগাদ খাজনা, দাখিলা কর্তন, মিউটেশনে ভুলভ্রান্তির সংশোধন, ভিপি সম্পত্তি, দেওয়ানি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, ১৪৪ ধারার পিটিশন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, এলএসডি মামলাসহ হরেক রকম কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে। কিন্তু কামাল হোসেন আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে সব কাজেই করেন অর্থ বাণিজ্য । সুত্র জানায়, ইতমধ্যে নায়েব কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে । ভূমি সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অনুলিপি দেয়া হয়েছে । এসব অভিযোগকারীরা অবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ, রুপগঞ্জ, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব কামাল হোসেনের আপাদমস্তকে একজন দুর্নীতিবাজ। টাকা ছাড়া তিনি কিছুই বোঝেন না। সম্প্রতি গোলাকান্দাইল হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ভদ্র মহিলা তার স্বামীর দেওয়া সম্পত্তি ২০ শতাংশ জমি নামজারীর জন্য নায়েবের সহকারীর কাছে গেলে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করা হয়। পরবর্তীতে কমিয়ে ৩৫ হাজার টাকায় করে দেয়া হয়।
ব্যবসায়ী আয়াত আলী জানান, ক্রয়সুত্রে মালিকানা প্রাপ্ত ২শতাংশ জমির নামজারি করাতে গোলাকান্দাইল ভূমি অফিসে গেলে নায়েব কামাল হোসেন তাকে কাগজপত্রে সমস্যার কথা বলে ৭০ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে ৪০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফা করা হয়।
কামালের মত লোকেরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। টাকার জন্য যা খুশি তাই করেন। ঘুষের টাকায় একরামপুরে গড়ে তুলেছেন ২টা বাড়ী, একটি ৬তলা, অপরটি ৩তলা। পাশেই আছে সাড়ে ৪ কাঠার প্লট মানে বাগান বাড়ি। একরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৭কাঠার প্লটে টিনসেড সিএসজি গ্যারেজ। বসবাস করেন রাজধানীর ওয়ারী আর কে মিশন রোডের বাড়িতে। এছাড়াও তার নামে বে-নামে রয়েছে বিস্তর সম্পদ। চলাফেরা করেন ৩৫ লাখ মূল্যের একটি প্রাইভেট গাড়িতে।
এব্যাপারে কামাল হোসেন বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। দুদক সহ মন্ত্রণালয় আমাকে একাধিকবার এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কেউ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।