মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ মঙ্গলবার | ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বজন পরিচয়ে বেপোরোয়া, নানা অপকর্মে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ

বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | ১১:৪৪ অপরাহ্ণ

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বজন পরিচয়ে বেপোরোয়া, নানা অপকর্মে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের স্বজন পরিচয়ে দলীয় ক্ষমতার দম্ভে বেপোরায়া হয়ে উঠেছে কতিপয় ব্যাক্তি। তারা ভাতিজা, ভাগিনা, নাতি পরিচয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। এমনকি এক বিএনপি নেতাও এ পরিচয়ে সর্বত্র সমালোচিত। তাদের ভুমিদস্যুতা, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, দখল বেদখলের মধ্যস্থকারিসহ কমিশন বানিজ্যের নানা অপকর্মে অতিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক চালক, শ্রমিক ও এলাকার সাধারণ মানুষ।

ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলছেন দুই যুগেরও বেশী সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। দলের ভিতর এক পেশীয় ক্ষমতার আধিপত্য চলছে। এতে অবহেলিত হচ্ছে দলের ত্যাগী ও একনিষ্ট নেতাকর্মীর। এরফলে দলের ভেতর নতুন করে কোনো একনিষ্ট কর্মী তৈরী না হলেও সভাপতির স্বজন পরিচয়ে কিছু ভাতিজা, ভাগিনা, কিছু নাতি, বিএনপি নেতা নির্বিঘ্নে ভুমিদস্যু, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, দখল বেদখলের মধ্যস্থকারিসহ কমিশন বানিজ্যে করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। চাউর রয়েছে এদের মধ্যে আবার অনেকেই বছরের পর বছর এসব অবৈধ কর্মকান্ড করে কোটিপতিও বনে যাওয়ার পথে।

জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পুর্বপাড়াস্থ মজিববাগ, আলামিন নগর, মতিন হুজুর, বিলেরপাড় এলাকায় ভুমিদস্যু ও চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে গড়ে তুলেছে বিশাল বাহিনী। এসব এলাকায় কেউ জমি-বাড়ি বিক্রি করলে দিতে হয় টাকা আবার কেউ কিনলেও দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের ভাতিজা পরিচয়দানকারি থানা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পরিচয়দানকারী বাদল হোসেন মেম্বার। তিনি দখল করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ পুল সংলগ্ন আকবর শাহ মাজার। এ মাজারের নামে যত টাকা আসে, সব তার পকেটে যায়। বছরে ওরছ শরিফের নামে করে বিশাল বানিজ্য, আর প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাতে চলে বিভিন্ন নারীদের নিয়ে রং বেরংয়ের নাচ আর গান। এই মাজারের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে আসে মোটা অংকের টাকা। যা ভোগ করে নেয় বাদল নিজেই।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের আরেক ভাতিজা পরিচয়দানকারী গুলজার ওরফে ভান্ডারি গুলজার ওরফে পাকিস্তানি গুলজার। সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে এসব নামেই বেশি পরিচিত সে। ভান্ডারি গুলজারের দুই ছেলে রাসেল ও সাইফুল মজিবুর রহমানের নাতি বলেই পরিচিত।

এক সময় লেবারের এবং গার্মেন্সে কাজ করা সাইফুল এখন হাজ্বী সাইফুল ওরফে নাতি সাইফুল নামে বেশ পরিচিত। যার বর্তমানে ৪-৫টি ট্রাক সহ মজিববাগ ও আলামিন নগর এলাকা কয়েকটি জমি ও বাড়ি রয়েছে। মজিববাগ, আলামিন নগর বিল এলাকায় কেউ বাড়ির কাজ করলে নাতি সাইফুলের কথার বাইরে ইট, বালি, সিমেন্ট ও রড কিনতে পারেনা। তার কাছ থেকে বাধ্যতা মূলক কিনতে হবে।

এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় ডিএনডি খালের উপরে ও নিচে সরকারী জায়গা দখল করে ফুটপাতে ও রাস্তার উপরে দোকান বসিয়ে পুলিশ-সাংবাদিকদের নামে টাকা উঠিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে মুন্না ওরফে নাতি মুন্না, ভান্ডারি গুলজার, তার ছেলে রাসেল, খাজা মার্কেটের মালিকের ছোট ভাই কামরুল, ভাগিনা সালাউদ্দিন, নাসিক ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন ওরফে ডাকাত সালাউদ্দিন। বর্তমানে সালাউদ্দিন বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে পলাতাক থাকায় তার ছোট ভাই কামরুল ফুটপাতের দোকানের চাঁদার টাকা উত্তলনের দায়িত্ব পালন করছে।

পুরো পুল এলাকায় যেসব দোকান রয়েছে তারা সকলের আলাদা আলাদা ভাগ রয়েছে। আর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের আন্ডারে যে কয়টা দোকান রয়েছে প্রতি দোকান থেকে অগ্রিম ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়। আর প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা নেয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাশাপাশি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন মিজমিজি মজিববাগ, আলামিন নগর বিল এলাকায় গড়ে তুলেছেন ভুমিদস্যুর একটি বাহিনী।

স্থানীয় এক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির আমলে সিদ্ধিরগঞ্জের পুলে এই সালাউদ্দিনের অত্যাচারে এখানে এসে কোন কথা বা কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। সেই আমলে সালাউদ্দিনের তেমন কোন ব্যবসা বানিজ্য বা টাকা-পয়সাও ছিলনা। এখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার পরও সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে তার সবচেয়ে বড় চাউলের গোডাউন রয়েছে।

গরীবের পেটে লাথি মেরে খাড়া দলিল বা পাওয়ার নামা দলিল বলে ভুয়া দলিল করে নিরিহ মানুষের জমি-বাড়ি দখল করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের ভাগিনা পরিচয়ে।

ভান্ডারী গুলজার ও তার ছেলে রাসেল এর সারাদিন ডিউটি সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে। এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে সন্ধা হলে ফুটপাতের দোকানদারদের কাছ থেকে বিভিন্ন টাকা উঠায়। প্রতি দোকান থেকে ১০০, ১৫০ এবং ২০০ করে টাকা তুলে রাসেল।

নাতি মুন্না ডিএনডি খালের উপরে পুলের দোকান প্রতি দোকান থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিদিন। পাশাপাশি নাতি মুন্নারও মজিববাগ, আলামিন নগর বিল এলাকায় বিএনপি নেতাদের সাথে ভুমিদস্যু ও জমির দালালির কাজ রয়েছে। এখানে যারাই জমির কেনা-বেচা করবে নাতি মুন্নাকে টাকার একটা ভাগ দিয়ে কেনা-বেচা করতে হয়।

এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কে কোন দলের লোক সেটা দেখেনা। তারা চিন্তা করে আমরা এখানে বাড়ি ঘর করেছি, সারা জিবন এখানেই থাকতে হবে, আমাদের ছেলে-মেয়ে আছে, কার কাছে যাবো, প্রতিবাদ করতে গেলে, কোন ধরনের বড় সমস্যা হলে কে বা আমাদের সব সময় দেখে রাখবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের আত্মীয়-স্বজন পরিচয়ে তার ছত্রছায়ায় টাকার লোভে দিন দিন ভয়ংকর ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা।

আওয়ামী লীগের তৃনমূল এক কর্মী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বা তার আগে থেকেও আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলসহ আন্দোলন সংগ্রাম এবং দলীয় নানা কর্মসূচী পালন করেও তারা আজ সব কিছুতেই বঞ্চিত।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ডে বেশ কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে ভুমিদস্যু ও চাঁদাবাজ বাহিনী। ভূমিদস্যুরা একটা খাড়া দলিল/জমির পাওয়ার নামা করে এ ওয়ার্ডের মিজমিজি পুর্বপাড়া, মজিববাগ, আলামিন নগর এলাকায় বিভিন্ন নিরিহ মানুষের জমি নিয়ে জবর দখল করে আসছে। ভূমিদস্যুর অবাধ বিচরণ বেড়েছে এ এলাকায়। খাড়া দলিল বা জমির পাওয়ার নামার নামে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে নিরিহ কিছু মানুষের সাথে।

এছাড়া একাধিক দোকান মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে জানা যায়, কোন দোকান মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মারধরসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করা হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজরা একত্রিত হয়ে নানা কৌশলে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। আর তাদেরকে নেপথ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী মহল। ফলে দোকান বসিয়ে সাধারণ নিরীহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজরা।

এবিষয়ে কথা বলতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমালে মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।




সর্বশেষ  
জনপ্রিয়  

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন