নারায়ণগঞ্জের হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে ঢাকার ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেছে।সোমবার (২ নভেম্বর) সকালে ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে গেলে প্রথমে ডিআইটি এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়।
এরপর চাষাঢ়া, শিবু মার্কেট, জালকুড়িতে এলাকাতেও বাধা দেয় পুলিশ। সর্বশেষ সাইনবোর্ড এলাকায় বাধা দিলে নেতাকর্মীরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পায়ে হেঁটে ও মোটর সাইকেলে বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশে যোগদান করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের সমন্বয়ক ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, সকল বাধা উপেক্ষা করে প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশে যোগদান করেছেন।
এর আগে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসুচি হিসাবে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়না দিয়েছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বাধা দেয়ার কারণে আমারা ঢাকায় পৌছাতে পারছি না।
যার কারণে আমরা সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান করে আমাদের মনের ব্যাথার ক্ষোভ প্রকাশ করবো। আপনারা যে যেখানে আছেন প্রত্যেকে সাইনবোর্ডে এসে জমায়াত হন।
আমরা এখানে মিছিল করবো, সমাবেশ করবো তারপর আমরা ফিরে আসবো। আপনারা সবাই সুশৃঙ্খলা ভাবে এখানে চলে আসেন। আমরা রাস্তায় আছি আপনারা সকলেই অবস্থান নেন।
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকেউদ্দেশ্য করে বলেন, কোন অবস্থাতে বাংলদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস দেখতে চাই না। এই ব্যাপারে আপনাকে বার বার আহবান জানাবো।
আপানার ঈমানকে রক্ষা করার জন্য। মানুষের সামনে এই কথা বলে ঈমানকে প্রকাশ করুন। আমি এখান থেকে ফ্রান্সের দূতাবাস রাখবো না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে মন্তব্য করে তার এব্যাপারে আমি নিন্দা প্রকাশ করছি।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সড়কে ছিল সাঁজোয়া যান ও জলাকামান। সাইনবোর্ড এলাকায় ছিল বিপুল সংখ্যা র্যাব-পুলিশ-ডিবি সদস্যরা।
সকাল পৌঁনে নয়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কটিতে ব্যারিকেড দেয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কেও ব্যারিকেড দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় উভয় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কর্মমুখী যাত্রী ও অন্যান্যরা পড়েন বিপাকে।
অনেকেই পরিবহন থেকে নেমে পায়ে হেটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে ব্যারিকেড ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরও প্রায় ঘন্টাখানেক পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সাইনবোর্ড এলাকায় দায়িত্বরত নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো বা পরিস্থিতি যাতে অস্বাভাবিক না হয় সেজন্য হেফাজত নেতাদের বড় অংশকে অবরুদ্ধ করি।
আমাদের সাথে জেলা হেফাজত ইসলামের আমিরসহ নেতৃবৃন্দরা একাত্ততা পোষণ করে তারা কয়েকজন মাইক্রোবাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান এবং অধিকাংশ নেতাকর্মী ফিরে গেছে।
অপরদিকে কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কিছু পরিবহন ছেড়ে গেলেও সাইনবোর্ড এলাকা থেকে প্রশাসনের লোকজন ফিরিয়ে দেয়। পরিবহন সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
হেফাজত নেতাকর্মীদের সমাবেশে সাইনবোর্ড থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার ও সাইনবোর্ড থেকে লিংরোডের জালকুড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। পায়ে হেটে কর্মস্থলে যেতে হয় যাত্রীদের। অনেক যাত্রী বাড়িতেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) মো: কামরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের প্রবেশমুখে ডিএমপির চেকপোস্ট বসানো হয়। ঢাকায় সীমিত পরিসরে যানবাহন যেতে দেওয়া হয়। এজন্য যানজট দেখা দেয়।
গণপরিবহন স্বাভাবিকের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান বেলা ১২ টার পর থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জনজীবন আগের অবস্থায় ফিরে আসে।