বিশেষ প্রতিনিধি: ফতুল্লা রেলষ্টেশন অপরাধ জগতের নতুন আতঙ্ক ‘কিশোর গ্যাং! হেনো কোনো কাজ নাই যা এরা করতে পারে না। বয়স দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই এদের সংঘটিত অপরাধ কী ভয়ঙ্কর। হত্যা, অপহরণ,ব্ল্যাক মেইলিং, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ পাড়া মহল্লায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়তই। পাড়া-মহল্লায় এরা অনেকটা অপ্রতিরোধ্য। এদের শাসন করতে গিয়ে এলাকার সম্মানিত মানুষও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। অনেকের কাছে এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। পুলিশের খাতায় তালিকা না থাকায় কিংবা বয়সে কম হওয়ায় এরা গ্রেফতারের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ছোট মামলায় গ্রেফতার হয়ে জামিনে ফিরে এসে আবার আগের মতো দলবল নিয়ে শুরু করে নানা অপরাধ। অনেক সময় পরিবারের লোকজনের আশকারাতে বেপরোয়া হয়ে শুরু করে এসব গ্যাং।রাতের অন্ধকারে গার্মেন্টস ফেরত নারী শ্রমিকরা যেমন নিরাপদ নয় তেমনি সাধারণ পথচারীরাও তাদের হাতে জিম্মি।তারা নারীদের শ্লীলতাহানির হানী ধর্ষনসহ পাশাপাশি কেড়ে নিয়ে যায় মোবাইল ফোন,নগদ টাকা,স্বর্নালংকার।পথচারীদের নিকট থেকে ও ছিনিয়ে নেয় মোবাইল ফোন সহ নগদ টাকা- পয়সা।কখনো পথচারীদের নিকট টাকা পয়সা না থাকলে তাদের মাদক ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে তার পরিবারের নিকট থেকে দাবী করা হয় মোটা অংকের টাকা।তাদের হাতে নাজেহাল হলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে নির্যাতিত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও টু শব্দটি পর্যন্ত করেনা কেউ। কেউ কেউ থানায় অভিযোগ করলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নির্যাতিত- ভুক্তভোগীদের অধিকাংশরাই আইন সাহায্যের প্রার্থী হচ্ছেনা। অপরদিকে সামাজিক এবং প্রশাসনিক ভাবে এদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় দিনকে দিন এরা হয়ে উঠেছে অতিমাত্রায় বেপোরোয়া।এসব কিশোর অপরাধী নির্মূলে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে তৎপর থাকলেও ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকায় তা ফলপ্রসু হচ্ছে না।তাই তাদের হাতে নাজেহাল হচ্ছে সাধারন মানুষ।
ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকায় কিশোর গ্যাং লিটার হচ্ছে, বেপারী পাড়া জলিলের ছেলে জয়ও রেলষ্টেশন জোড়পুল এলাকার আঃহাইয়ের ছেলে জয় এই দুই জয়ের নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে তোফাজ্জলের ছেলে লিটন,নিজামের ছেলে শুভ, আমান উল্লাহর ছেলে রানা,খালেকের ছেলে হাসান, সোলেমানের ছেলে সোহেল ও রুবেল, সামসুলের ছেলে চোরা সুমন, তাহেরের ছেলে চোরা জনি বরিশাইল্লা শান্ত, রাজন, ইসমাইলসহ প্রায় ১৫/২০জন কিশোর গ্যাং। ৫ সেপ্টম্বর রেলষ্টেশন পশ্চিম পাশে খোকন নামে এক ব্যাক্তিকে এক নারীকে ঘরে ডুকিয়ে ব্ল্যাক মেইলিং করে মারধর করে গুরুত্ব জখম করে আটক করে রাখে। পরে তার স্ত্রী ভিক্ষা করে জমানো ৫ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনে। ১৮ অক্টোবর রাত ৮টায় অস্ত্র ঠেকিয়ে অজ্ঞাত এক গার্মেন্ট কর্মীর কাছ থেকে মোবাইলও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাদের দলের সদস্যরা পথচারী সেজে মোবাইল পাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ট্রেনে তুলে দেয়। ১৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা উওরা থেকে এক ব্যাক্তি ব্যবসায়ী কাজে ফতুল্লা রেলষ্টেশন আসেন। এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ব্যবসায়ীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে সাথে থাকা নগদ ৩৭ হাজার টাকা ও একটি স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
১০ অক্টোবর বিকালে দুই স্কুল ছাত্রকে পকেটে গাজাঁ ডুকিয়ে মাদক সেবন আখ্যা দিয়ে তার পরিবার থেকে ৩০ হাজার টাকা এনে ছেড়ে দেয়। ১৮ অক্টোবর মামুন নামে এক যুবক তাদের দলের ৯ কিশোর গ্যাং সদস্যর বিরুদ্ধে ফতুল্লাা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে । মান্নানের দাবী তাদের অপকর্ম বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে।
১৪ অক্টোবর (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) এক মহিলা এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করে। মহিলার দাবী,বিভিন্ন সময় তারা অপহরণ,ব্ল্যাক মেইলিং, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ করে আসছে । অপরিচিত এক লোককে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া সময় আমি বাধা দিলে তারা আমাকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে।
১৪ আক্টোবর শরিফ নামক একজনকে পাচ হাজার টাকা চাঁদার দাবীতে মারধর করে ছিনিয়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন।এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ৩১ আগষ্ট তিন যুবককে পকেটে গাঁজা ডুকিয়ে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে মারধর করে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে । পরে সোহেল নামে এক যুবক টাকা আনার কথা বলে বাড়ি গিয়ে তার বাবা মাকে ঘটনা বলে । যুবকের বাবা মা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চোরা সুমন ও রানা নামে দুই কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে। এবং আটককৃত দুই যুবককে উদ্ধার করে। এঘটনায় ৭ কিশোর গ্যাং সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২৮ আগষ্ট ২০১৯ সরিষার তেল কিনতে গিয়ে ১৫ বছর বয়সী এ কিশোরী ফতুল্লার রেলস্টেশন জোড়াপুল এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হয়। এই বাহীনির ৩ সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা হয় । এঘটনায় অজ্ঞত কারনে অন্যরা আসামী হয়নি।
এছাড়াও কয়েক দিন আগে এই বাহিনীর বেশ কয়েক সদস্য গার্মেন্টস ফেরত এক নারীকে জোড় পূর্বক তুলে নিয়ে রেল লাইন জোড়পুল সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাড়ীতে নিয়ে ধর্ষণ করতে চাইলে স্থানীয় এক যুবক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঐ তরুনীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও তরুনীটির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় জয় বাহিনীর সদস্যরা।
কিশোর অপরাধী প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জায়েদুল আলম বলেছিলেন, “কিশোর অপরাধী নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেষ্ট আছে। তবে, কিশোর অপরাধী নির্মূল করা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি পরিবার থেকে নিজ নিজ সন্তানের প্রতি যতœবান হতে হবে এবং সামাজিক ভাবে সকলের সচেতন হতে হবে।”