বিশেষ প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বড় কোন আয়োজন এড়িয়ে এ বছর প্রয়াত সিনিয়র সাংবাদিকদের স্মরণ করলো জাতীয় প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের ৬৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত ১৮ সিনিয়র সাংবাদিকের স্মরণে এক শোক সভার আয়োজন করা হয়। চলতি ২০২০ সালের এখন পর্যন্ত ১৮ সদস্যকে হারিয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের স্মরণে এক স্মরণসভার আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।
রোববার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম।
প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় পরিচালিত সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুগ্ম-সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম, সদস্য কুদ্দুস আফ্রাদ, শাহনাজ বেগম প্রমুখ। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম,সাবেক প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র সাংবাদিক আতাউর রহমান, প্রেসক্লাব সদস্য দেলোয়ার হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ইসতিয়াক রেজা,সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক, দৈনিক দেশ পত্রিকা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি খো: মাসুদুর রহমান দিপু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিক মহিতুল ইসলামের সহধর্মিনী সাহিদা ইসলাম স্বামীর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।
স্মরণসভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আনন্দ করার চেয়ে হারানো সদস্যদের স্মরণ করা জরুরি। কারণ ক্লাবের সদস্য মৃত্যুবরণ করলে ক্লাব চত্বর থেকে তাদের বিদায় জানানো হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর হারানো সদস্যদের স্মরণ করা প্রেসক্লাবের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু তাদের স্মরণ করেই দায়িত্ব শেষ করছি না। প্রেসক্লাব একটি পরিবার। ক্লাবের যেসব সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের পরিবারের পাশে ক্লাব সবসময় থাকবে।’
২০২০ সালে প্রেসক্লাব যাদের হারিয়েছে : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ডিপি বড়ুয়া চলতি বছরের ৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান মারা যান ২৮ আগস্ট। তিনি ১৯৬৯ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নুরুদ্দিন ভূঁইয়া ৫ অক্টোবর মারা যান। তিনি তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে দৈনিক ইনকিলাবের চিফ রিপোর্টার ছিলেন। ৩১ আগস্ট মারা যান দৈনিক দেশবাংলার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। দ্য নিউজ টুডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর পান্না গত ১৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)এর সাবেক সাব-এডিটর ফজলুন নাজিমা খানম মারা যান ২৭ জুলাই।
দৈনিক দিনকালের সাবেক বার্তা সম্পাদক ও কবি মুশাররাফ করিম ১১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। দৈনিক সংগ্রামের সাবেক মফস্বল সম্পাদক কাজী মো. শামসুল হুদা মারা যান ২৯ জুলাই। ৮ জুলাই মারা যান দৈনিক সকালের খবর ও দৈনিক আমার দিনের সাবেক সম্পাদক রাশীদ উন নবী। ডেইলি অবজারভার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা সহ দৈনিক জনতার সম্পাদক খোন্দকার মুহিতুল ইসলাম ২৯ এপ্রিল, দৈনিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক কবি মাশুক চৌধুরী ২৩ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাবেক বার্তা সম্পাদক আবদুল্লাহ এম হাসান গত ১৭ জুলাই মারা যান। ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সহযোগী সম্পাদক রওশন উজ জামান মারা যান গত ৮ এপ্রিল।
এছাড়া সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক কাজী গত ৩ জুলাই, আহসান হামিদ ১০ মার্চ, খোন্দকার মোজাম্মেল হক ২৯ জুন, আবদুস শহিদ ২৩ আগস্ট এবং আসলাম রহমান গত ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন। সভায় প্রয়াত সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা শেয়ার করেন। এ সময় সভাস্থলে উপস্থিত সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।